চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসা ছাত্রদের সংঘর্ষ: 'ওঁ' চিহ্নিত বাসে ভাঙচুর, হিন্দুদের প্রতি সতর্কবার্তা
চট্টগ্রাম,: চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসার ছাত্রদের দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য একটি অঙ্গভঙ্গি (আঙুল দেখানো) কেন্দ্র করে ব্যাপক অরাজকতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় অন্তত ২ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন এবং পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এই অস্থিরতার মধ্যে একটি বাসে 'ওঁ' চিহ্ন দেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন সম্পত্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র মতে, গতকাল দুই দল মাদ্রাসা ছাত্রের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদ শুরু হয়, যা দ্রুতই সহিংস রূপ নেয়। উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ বহু মানুষ আহত হন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
তবে এই অরাজকতার মধ্যে ভাঙচুর হওয়া একটি বাসে 'ওঁ' প্রতীক নজরে আসার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, হিন্দুদের মালিকানাধীন বাসটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এটি অতীতের বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যেখানে সংঘাত বা অস্থিরতার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছিল।
পর্যবেক্ষক মহল ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ ধরনের গোষ্ঠী কখন, কোথায়, কীভাবে বা কেন অরাজকতা শুরু করে, তা বোঝা মুশকিল। একবার উত্তেজিত হয়ে গেলে তারা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং কে কার সঙ্গে লড়ছে, তার পরোয়া করে না। ফলাফল যা-ই হোক না কেন, তাদের লক্ষ্য থাকে আশেপাশের দোকানপাট, বাড়িঘর লুটপাট করা। অতীতের ঘটনাগুলোর উদাহরণ টেনে অনেকে বলছেন, নড়াইলে হিন্দুদের বাড়িঘর থেকে বাথরুমের বদনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে ইঁট খুলে নেওয়া হয়েছিল, এমনকি রংপুরের মাজারের কাছে রান্না করা খাবারও ফেলে দেওয়া হয়নি। এসব ঘটনাকে এই গোষ্ঠী তাদের 'বিজয়ের অংশ' হিসেবে ধরে নেয়।
এই পরিস্থিতিতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, যখনই কোথাও কোনো অরাজকতা বা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তখনই হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। বর্তমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে সতর্কতা ও নজরদারি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।