প্রেমের ফাঁদে ফেলে সনাতনী মেয়েদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা: উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা নিয়ে আতঙ্ক!
সম্প্রতি দেশের নানা প্রান্তে এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠছে, সুপরিকল্পিতভাবে সনাতনী মেয়েদের লক্ষ্য করে ধর্মান্তরের ফাঁদ পেতেছে কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী। ঘটনাগুলির ধরন প্রায় একই—প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেমের অভিনয়, এরপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি এবং শেষপর্যন্ত ধর্ম পরিবর্তনের চাপ। সমাজে একে বলা হচ্ছে “প্রেমের আড়ালে ষড়যন্ত্র”।
ঢাকার মিরপুর এলাকার এক কলেজছাত্রী এমন ফাঁদ থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, “প্রথমে ছেলেটি ভুয়া নামে পরিচয় দেয়। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হয়। আমরা কিছু টের পাইনি। পরে জানতে পারি সে আমার মেয়েকে বলছে—বিয়ে করতে হলে ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে। তখনই আমরা প্রতিবাদ করি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হই।” ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেও সম্প্রতি একই ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। স্থানীয় এক ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ে কলেজে যাওয়া-আসার পথে কয়েক মাস ধরে এক যুবক তাকে অনুসরণ করছিল। পরে সে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেয়। কিছুদিন পর আমরা শুনি, মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমরা পুলিশকে জানালে বিষয়টি তদন্তে নেয়।” তাঁর মতে, “এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সংগঠিতভাবে মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাগুলি নিছক আবেগের সম্পর্ক নয়, এর পেছনে সুসংগঠিত একটি চক্র সক্রিয়। লক্ষ্য হচ্ছে হিন্দু সমাজকে দুর্বল করা এবং পরিবারগুলিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা। ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য HindusNews-কে জানান, “প্রেম ও সম্পর্কের আড়ালে যখন একটি ধর্মকে আক্রমণ করা হয়, তখন তা নিছক সামাজিক সমস্যা নয়—এটি রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তবে অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানাচ্ছে, অনেক সময় থানায় অভিযোগ দিলেও প্রাথমিকভাবে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিছু এলাকায় অবশ্য পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কয়েকটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে অনেক অপরাধী অল্পদিনের মধ্যেই আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। এতে সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে।
এ ধরনের ঘটনার সামাজিক প্রভাব ভয়াবহ। একটি মেয়েকে ধর্মান্তরিত করার চাপ মানে গোটা পরিবারকে মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে দেওয়া। সমাজে ভাঙন তৈরি হয় এবং পারিবারিক শান্তি নষ্ট হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা ভয় বা লজ্জার কারণে ঘটনার কথা পরিবারকে বলতে চায় না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
একজন কলেজপড়ুয়া তরুণী HindusNews-কে বলেন, “আমরা সামাজিক মাধ্যমে অনেক সময় অচেনা ছেলেদের সঙ্গে কথা বলি। কেউ কেউ খুব ভালোভাবে কথা বলে। কিন্তু কিছুদিন পর আসল উদ্দেশ্য বোঝা যায়। আমি চাই আমাদের মেয়েরা আগে থেকেই সচেতন থাকুক।”
সনাতনী সমাজের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, এ ধরনের চক্রান্ত রুখতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অভিভাবকদের সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে এবং সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলেই আইনের দ্বারস্থ হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন।
প্রেমের আড়ালে ধর্মান্তরের এই চক্রান্ত নিছক কয়েকজনের প্রতারণা নয়, বরং একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। যদি সময়মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে এর প্রভাব আগামী দিনে সমাজে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, সতর্কতা এবং সক্রিয় প্রতিরোধ।