শ্রীমঙ্গলে ১৫৭ টি মন্ডপে পূজিত হবেন দেবী দুর্গা
শান্ত পাল,
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা, তারপরই বেজে উঠবে ঢাক-ঢোলের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হবে শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি পূজা মণ্ডপ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার শ্রীমঙ্গলের ১৫৭টি মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবকে কেন্দ্র করে সর্বত্র এখন সাজসাজ রব। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামীণ পাড়া-মহল্লার মন্দির— প্রতিটি জায়গায় চলছে পূজার প্রস্তুতি।
প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পীরা। বাঁশ, কাঠ, খড়, সুতলি আর কাদামাটি দিয়ে নিখুঁত কারুকার্যে প্রতিমা গড়ে তোলা হচ্ছে দিন-রাত সমান তালে। কারও হাতে চলছে দেবীর হাত-পা গড়ার কাজ, কেউ মাটির আস্তরণ দিচ্ছেন, কেউ আবার তুলির আঁচড়ে রঙ করছেন। ইতোমধ্যেই কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মূর্তি প্রায় প্রস্তুত, এখন শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা আর রঙতুলির কাজ চলছে।
প্রতিমা শিল্পী হনু পাল জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর প্রতিমার চাহিদা অনেক বেশি। তাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমানে কাদামাটি ও রঙের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাতেও তাঁদের প্রতিমা পাঠানো হচ্ছে। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের মুখ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পূজা আয়োজকদের ব্যয়ও বেড়েছে। তবুও উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। শহরের বাজার, অলিগলি, মন্দির— সর্বত্রই এখন উৎসবের আমেজ। আলো, রঙ আর ঢাকের শব্দে ধীরে ধীরে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো এলাকা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সুজিত রায় বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। শ্রেণি বা উঁচু-নিচুর বিভেদ ভুলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয় বলেই দুর্গোৎসব মিলনমেলার রূপ নেয়। এবছরও প্রায় ১৫৭টি মণ্ডপে জাঁকজমকভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশাসনও ইতোমধ্যেই পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গোৎসব পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়েও কঠোর নজরদারি থাকবে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও টহল দেবে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে। শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিকভাবে প্রতিটি মণ্ডপের তালিকা সংগ্রহ, পরিদর্শন এবং রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি কোণায় এখন এক অনন্য প্রাণচাঞ্চল্য। প্রতিমা তৈরির কারখানায় ঘাম ঝরাচ্ছেন শিল্পীরা, মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ, আয়োজকেরা ব্যস্ত তদারকিতে। সর্বত্র এখন একটাই প্রতীক্ষা— কয়েক দিনের মধ্যেই দেবী দুর্গার আগমনে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি পূজা মণ্ডপ।