মহালয়ার পূর্ববর্তী ‘অপর পক্ষ’ শুরু, পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তিল তর্পণ ও শ্রাদ্ধ।

1 week ago
VIEWS: 73

শারদীয় দুর্গোৎসব আসার আগে হিন্দু সমাজে এক বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, যাকে বলা হয় অপর পক্ষ বা পিতৃপক্ষ। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা থেকে শুরু হয়ে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত চলা এই ১৫ দিনের সময়কে হিন্দুধর্মে মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য নিবেদিত পাক্ষিক বলে মনে করা হয়। মহালয়ার দিন অর্থাৎ অমাবস্যায় এর সমাপ্তি ঘটে।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই সময়কালকে পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাদের আত্মার শান্তির জন্য সবচেয়ে পবিত্র সময় হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বাস করা হয়, পিতৃপক্ষের সময়ে পূর্বপুরুষরা তাদের সন্তানদের তর্পণের অপেক্ষায় থাকেন। তাই ভক্তিপূর্ণ মন নিয়ে জল, তিল ও অন্ন নিবেদন করা প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য। এ সময় শ্রাদ্ধ, তিল তর্পণ ও দানপুণ্য করার বিশেষ নিয়ম রয়েছে।

তর্পণকে হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলা হয়। এটি হলো সেই বিশেষ কর্ম, যার মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তিলসহ জল নিবেদন করা হয়। তর্পণ প্রধানত দুই প্রকার— স্নানাঙ্গ তর্পণ ও নিত্য তর্পণ। প্রতিদিন নদী বা পুকুরে স্নানের সময় যে তর্পণ করা হয় তাকে স্নানাঙ্গ তর্পণ বলা হয়, আর মহালয়ার আগে পিতৃপক্ষ জুড়ে যে তর্পণ পালিত হয় সেটিই নিত্য তর্পণ। নিত্য তর্পণ ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার পরদিন শুরু হয়ে মহালয়ার অমাবস্যা পর্যন্ত চলে।

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, যাদের মা-বাবা প্রয়াত হয়েছেন তাদের তর্পণ করা অবশ্য কর্তব্য। একইসঙ্গে বংশের অন্যান্য অগ্রজ যারা প্রয়াত হয়েছেন, এমনকি মাতৃকূলের প্রয়াত আত্মীয় এবং বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রীর বংশের প্রয়াত আত্মীয়দের জন্যও তর্পণ করতে হয়।

তর্পণেরও রয়েছে নানা প্রকারভেদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য পিতৃতর্পণ, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, বাম তর্পণ এবং শূদ্র তর্পণ। বিশ্বাস করা হয়, প্রয়াত আত্মারা মৃত্যুর পর কেউ স্বর্গে, কেউ নরকে, কেউ বৈকুণ্ঠ বা কৈলাশে অবস্থান করেন কিংবা নতুন জীবনে জন্মগ্রহণ করেন। তারা যেখানেই থাক না কেন, একসময় বংশধরদের তর্পণের মাধ্যমে জল ও অন্ন পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। আর সেই কারণেই তাদের জন্য তর্পণ করা প্রয়োজন। এটি আত্মার শান্তি বয়ে আনে এবং জীবিত বংশধরদের মধ্যেও মানসিক প্রশান্তি সঞ্চার করে।

শুধু পূর্বপুরুষ নয়, দেবতা, ঋষি ও অন্যান্য মহান ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশ্যেও তর্পণ করার নির্দেশ রয়েছে। সাধারণত পুকুর, নদী বা অন্যান্য জলাশয়ে স্নান শেষে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে তিল সহ তর্পণ করা হয়। তবে আঞ্চলিকভাবে এর সঙ্গে আরও নানা আচার-অনুষ্ঠান জড়িয়ে আছে। কোথাও কোথাও পিতৃপক্ষ উপলক্ষে জামাই, মেয়ে বা ভাগিনাদের নিমন্ত্রণ করে খাবারের আয়োজন করা হয় এবং নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয়।

ধর্মীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, পিতৃপক্ষ আমাদের সমাজে শুধুমাত্র পূর্বপুরুষের স্মরণ নয়, এটি পারিবারিক বন্ধন ও প্রজন্মের ঐতিহ্যকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। সন্তানদের দায়িত্ববোধ, ভক্তি ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই আচার-অনুষ্ঠান পালন হয়ে আসছে।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন