
ট্রায়ালে সফল ক্যানসারের ভ্যাকসিন, নতুন আশার আলো
বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষকে প্রতি বছর ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির সঙ্গে লড়তে হয়। চিকিৎসার নানা পথ থাকলেও এখনো কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান মেলেনি। ঠিক এমন সময়েই রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করলেন। তারা সফলভাবে তৈরি করেছেন একটি ভ্যাকসিন, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে। রাশিয়ার ফেডারেল মেডিকেল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল এজেন্সি (এফএমবিএ) ঘোষণা করেছে, তাদের নতুন ভ্যাকসিন “এন্টারোমিক্স” ট্রায়ালে সফল হয়েছে এবং এটি এখন রোগীদের জন্য প্রয়োগের উপযোগী।
রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, ইস্টার্ন অর্থনৈতিক ফোরামে এফএমবিএ প্রধান ভেরোনিকা স্কভোর্টসোভা এই সুখবর দেন। তিনি জানান, এন্টারোমিক্স তৈরি করা হয়েছে সর্বাধুনিক এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই প্রযুক্তিই বিশ্বের কাছে ব্যাপক পরিচিত হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে যেখানে দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছিল, সেখানে নতুন এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরের কোষকে প্রশিক্ষণ দেয় বিশেষ প্রোটিন তৈরি করতে। পরবর্তীতে সেই প্রোটিন ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে আক্রমণ চালায় এবং ধীরে ধীরে টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, টানা তিন বছর ধরে এ ভ্যাকসিনের ওপর প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো—বারবার ডোজ দেওয়ার পরও কোনো ধরনের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আরও আশার কথা হলো, কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের আকার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছোট হয়ে গেছে, আবার কোথাও টিউমারের বৃদ্ধি প্রায় সম্পূর্ণরূপে থেমে গেছে। শুধু তাই নয়, এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
প্রাথমিকভাবে এন্টারোমিক্স ব্যবহার করা হবে কোলন ক্যানসার চিকিৎসায়। তবে বিজ্ঞানীরা এখানেই থেমে থাকছেন না। তারা ইতোমধ্যেই কাজ করছেন গ্লিওব্লাস্টোমা—এক ধরনের মারাত্মক এবং দ্রুত বর্ধনশীল মস্তিষ্কের ক্যানসার—এবং বিভিন্ন ধরনের মেলানোমা, এমনকি চোখের মেলানোমার মতো কঠিন ক্যানসার চিকিৎসায়ও এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের উপযোগী করার লক্ষ্যে।
বিশ্বের চিকিৎসা মহলে এই ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মতো চিকিৎসা রোগীদের কষ্ট বাড়ায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্থায়ী সমাধান দেয় না। তাই রাশিয়ার এই সাফল্যকে যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়, তাহলে খুব শিগগিরই বিশ্বব্যাপী ক্যানসার চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।