
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কি তাহলে ধর্মীয় স্থানকে গাঁজার আসর বলতে চান? - সুস্মিতা কর
বর্তমান সরকারের আমলেও সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের শিকার বলে জোরালো অভিযোগ করেছেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, ‘বারংবার সরকারের পক্ষ থেকে নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবার কথা বলা হলেও বারবারই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে আমরা সংখ্যালঘু।’
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। নিরাপত্তা বাধায় সংখ্যালঘু সম্মেলন স্থগিত করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আটদফা দাবি ও দুর্গা পূজার নিরাপত্তার বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সুস্মিতা কর বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুর্গাপূজার মণ্ডপ থেকে গাঁজার আসর বাদ দেয়ার কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কি তাহলে ধর্মীয় স্থানকে গাঁজার আসর বলতে চান? তাহলে বোঝা যায় উনারা সংখ্যালঘুদের অ্যাটাক (আক্রমণ) করার জন্য বসে আছেন।’
সুস্মিতা কর বলেন, ভারতে নতুন আবাসন নীতিমালা করা হয়েছে। এই নীতির পরও সরকারের টনক নড়ছে না। মানুষ তার নিরাপত্তা চায়। সে যদি নিরাপত্তা না পায়, তাহলে সে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। বিগত কোনো সরকারের আমলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপদ ছিল না। এখনো নেই।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ২২ আগস্ট ফার্মগেটের খামারবাড়িতে একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। হঠাৎ করেই একটি ইনডোর প্রোগ্রামকে (ঘরোয়া কর্মসূচি) নিরাপত্তার অজুহাতে প্রশাসন স্থগিত করে দেয়। এভাবে পর পর তিনবার নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সংখ্যালঘু সম্মেলনে বাধা দেয়। সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনুষ্ঠানটি করতে দেয়া যাবে না বলে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়। এতেই স্পষ্ট সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
আরও অভিযোগ করা হয়, বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজন উপদেষ্টা আছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমস্যা নিয়ে তাদের কখনো কথা বলতে দেখা যায়নি। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নেই। জুলাই আন্দোলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নয়জন শহীদ হয়েছেন। জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত রাজনৈতিক দল সারা দেশে পদযাত্রা করেছে। কিন্তু কোনো নেতাই সংখ্যালঘু শহীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। সরকারও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অথচ মাঝে মাঝেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহিংসতার শিকার হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের ৩৫টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, লুটপাট, হত্যা, নারীর শ্লীলতাহানি, প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির–গীর্জায় হামলা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দায়ীদের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে দেয়া ৮ দফা দাবি নিয়েও বর্তমান সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবিগুলো নিয়ে সরকার আলোচনা শুরু না করলে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে অনশনের পাশাপাশি গত ৫৪ বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করার ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি প্রীতম পাল, সুব্রত বর্মণ, লিংকন দত্ত, নন্দ দাস ও সুমন ত্রিপুরা।