
মবের শিকার প্রদীপ দাসের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন, চিড়া-মুড়ি খেয়েই চলছে দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক, HindusNews:
গত ৯ আগস্ট রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাটে সংঘবদ্ধ মবের হামলায় প্রাণ হারান মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের চার্জার ভ্যানচালক প্রদীপ দাস ও তার ফুফা শ্বশুর রূপলাল দাস। সেই রাতের পর থেকে প্রদীপ দাসের পরিবারে নেমে এসেছে অমানিশার অন্ধকার। পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে পাঁচজন সদস্যের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি প্রদীপ দাসকে হারিয়ে তারা এখন না খেয়ে কিংবা আধপেটা খেয়ে দিন পার করছে। কখনো শুকনো চিড়া-মুড়ি, আবার কখনো একবেলা খেয়ে সারাদিন না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে। ছোট শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদলেও মা-বাবা কিছু দিতে পারছেন না এ দৃশ্য যেন চোখে সহ্য হয় না। একসময় মুচির কাজ করতেন প্রদীপ দাস। অসুস্থ হয়ে সেই কাজ ছাড়তে বাধ্য হন। বহু কষ্টে ধার-দেনা করে চিকিৎসা করানোর পর একটি চার্জার ভ্যান কিনেছিলেন। সেই ভ্যান চালিয়েই পরিবারের মুখে অন্ন জুটত। কিন্তু হঠাৎ করেই মবের হাতে নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়ে তিনি পৃথিবী ছেড়ে গেলে অশ্রু ও অনাহারই এখন এই পরিবারের নিত্যসঙ্গী। স্ত্রী দুলালী রানী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমরা ঘরহীন, অন্যের জায়গায় থাকি। আমি অসুস্থ, কাজ করতে পারি না। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। অনুদান যা পেয়েছিলাম তা দিয়ে মাত্র এক সপ্তাহ সংসার চলেছিল। আজ উপজেলা প্রশাসন থেকে কিছু চাল ডাল দিয়েছে তা দিয়েও হয়তো ১ সপ্তাহ চলবে তারপর আবার আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে। বড় ছেলে দুলাল কুমার হতাশার সুরে বলেন, এক মাস ধরে দৌড়াদৌড়ি করছি, কোনো কাজ জুটছে না। সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে গেছে। ছোট ভাইবোনদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ে কুমারী পলাশী রানী বলেন, আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। বই-খাতা কেনার টাকা নেই। ভবিষ্যৎ সব অন্ধকার হয়ে গেছে। সহপাঠীরা স্কুলে যায়, আমরা শুধু তাকিয়ে দেখি। প্রতিবেশীরা জানান, প্রদীপ দাসের পরিবার এখন একেবারেই অবহেলিত। আশপাশের সবাই রূপলাল দাসের পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও প্রদীপের অসহায় পরিবারকে কেউ খোঁজ নেয়নি। ক্ষুধার যন্ত্রণা আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রদীপ দাসের পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।