
কেন গয়াতে আজও তুলসী গাছ জন্মায় না?
ধর্মতত্ব ডেক্স:
ত্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র এবং মাতা সীতা হলেন ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর অবতার।
তাঁরা রাজা দশরথের মৃত্যুর পর দশরথের পিন্ডদানের জন্য বিহারে অবস্থিত বুদ্ধ গয়ায় গিয়েছিলেন।
বাবার পিণ্ডদানের জন্য সামগ্রীর জোগার করতে গিয়েছিলেন রাম এবং লক্ষণ। সীতা একা ছিলেন।
এদিকে সামগ্রী জোগার করতে গিয়ে বেলা গড়িয়ে যায়। ফলে রাজার পিন্ডদানের সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় সীতাকে দর্শন দেন
দশরথ। তিনি পুত্রবধূকে বলেন তাঁর খুব খিদে পেয়েছে, সীতা তাঁকে কিছু খেতে দিন। এই শুনে সীতা দশরথকে বলেন যে তাঁর দুই পুত্র পিন্ডদানের সামগ্রী জোগারের জন্যই বাইরে গিয়েছে। পুত্রদের হাতের জল পেতে হলে রাজা দশরথকে আর একটু অপেক্ষা করতে হবে। রাম-লক্ষ্মণ ফিরলে সীতা তাঁদের সঙ্গে শ্বশুরের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান
করবেন। কিন্তু অপেক্ষা করতে নারাজ ছিলেন রাজা। তিনি তখন সীতাকে আদেশ দিলেন ফাল্গু নদীর তীরে থাকা বালি দিয়েই তাঁর পিন্ডদান করতে। বাধ্য হয়ে সীতা তাই করলেন।
বালি দিয়ে পিন্ডদান হলো সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে। এদিকে তখনও রাম-লক্ষণ আসেননি। দশরথকে সীতা পিন্ড দিয়েছেন তা দেখেছিলেন বট গাছ, ফাল্গু নদী, একটি গরু, কাক, একটি তুলসী গাছ এবং একজন ব্রাহ্মণ।
রাম-লক্ষ্মণ ফিরে আসার পর সীতা তাঁদের সব বললেন। এমনকী ছয়জন যে সেই পিন্ড দানের সাক্ষী ছিলেন তাও বললেন। সাক্ষীদের জিজ্ঞাসা করা হলে ফাল্গু নদী, গরু তুলসী গাছ, কাক ও ব্রাহ্মণ জানালো সীতা
মোটেই পিন্ডদান করেননি। শুধু বাট গাছ জানালো যে সে দেখেছে মা সীতা নিয়ম মেনে রাজা দশরথকে পিন্ড দান করছেন। বাধ্য হয়ে দশরথ নিজে উপস্থিত হয়ে জানালেন সীতা সমস্ত বিধি পালন করে তাঁর পিন্ডদান করেছেন।
এবার ক্রুদ্ধ সীতা ফাল্গু নদী, গরু, কাক, তুলসী গাছ এবং ব্রাহ্মণকে অভিশাপ দিলেন। ফাল্গু নদীকে অভিশপ্ত করা হয়েছিলো যে এটি কেবল নামেই নদী থাকবে। এতে কখনও জল থাকবে না। এমনকি বর্ষাকালেও খরা থাকবে। এই কারণেই আজও গয়াতে ফাল্গু নদী শুকনো। গাভীকে অভিশাপ দেন যে, গরু পূজনীয় হলেও শুধুমাত্র তার পিছনের অংশই পূজিত হবে এবং গরুকে খাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হবে। আজও হিন্দু ধর্মে, শুধুমাত্র গরুর পিছনের অংশের পূজা করা হয়।
মাতা সীতা ব্রাহ্মণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তিনি যতই পান না কেন তিনি কখনও সন্তুষ্ট হবেন না এবং গরীব থাকবেন।
তাই দান-দক্ষিণা করেও ব্রাহ্মণরা কখনও সন্তুষ্ট হন না। মা সীতা তুলসীকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে গয়ার মাটিতে
কখনো তুলসী জন্মাবে না। তাই আজও গয়া ধামের মাটিতে তুলসী জন্মায় না। এটা আজ পর্যন্ত সত্য। এবং কাক সবসময় মারামারি কোরে খাবার খাবে। তাই আজও কাক একা খাবার খাই না।