
চট্টগ্রামের সনাতনী সম্প্রদায়ের ভোট চাইলেন নিলুফার চৌধুরী মনি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজী পুকুরপাড়ে চলছে চার দিনব্যাপী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ১৩৮তম আবির্ভাব উৎসব। শুক্রবার শুরু হওয়া এই উৎসবে গতকাল যোগ দেন বিএনপি নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি। তিনি চট্টগ্রামের সনাতনী সম্প্রদায়কে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত মাতৃসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নিলুফার চৌধুরী মনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু) নির্বাচনে জগন্নাথ হলের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চট্টগ্রামের সনাতনী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি আহবান জানান, তারা যেন আগামীতে ধানের শীষে ভোট দেন, যাতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার হাত আরও শক্তিশালী হয়।
মনি বলেন, বাংলাদেশের গতি-প্রকৃতি অনিশ্চিত। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সুন্দরভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের আশা প্রকাশ করেন। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, যুগে যুগে আধ্যাত্মিক মানুষ জন্ম নেন, যারা পুরো মানবকুলকে শিক্ষা দেন। তাদের মতোই একজন মহান পুরুষ ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, যিনি নারীদের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজকে শিক্ষা দিয়েছেন। অনুকুল ঠাকুর সৎসংগের চারটি অভিব্যক্তি ছিল-শিক্ষা, শিল্প, কৃষি ও সুবিবাহ। ধর্ম-বর্ণভেদে বিভক্ত হয়ে নয়, সত্যিকারের একজন মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা বুঝতে হবে। একজন নারী সম্মান পেলে
জাতিও সম্মান পায়। নারী নেতৃত্বের প্রসঙ্গে নিলুফার চৌধুরী মনি সাবেক
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাচার করেছিলেন এবং নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়কে উন্নয়ন করেছিলেন। এজন্য দেশনেত্রীকে সম্মান জানাই। একই সঙ্গে তিনি জিয়াউর রহমানের অবদানও স্মরণ করেন।
স্থানীয় সমাজে উৎসবের প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ উৎসব মানুষকে শিখিয়েছে ভিন্ন ধর্ম-বর্ণে বিভক্ত না হয়ে 'মানুষ' পরিচয়ে দাঁড়াতে। এখানে যেমন হিন্দু ভক্ত এসেছেন, তেমনি ভিন্ন ধর্মের মানুষও আমাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। এটাই আমাদের প্রকৃত শক্তি।
ভক্তদের সমাগমে মুখর উৎসব প্রাঙ্গণ:
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল দিনভর ভক্তদের সমাগমে উৎসব প্রাঙ্গণ ছিল মুখর। সকাল থেকে ভোরের প্রার্থনা, উষাকীর্ত্তন, ভজনকীর্ত্তন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও প্রসাদ বিতরণে ভক্তরা অংশ নেন। বিকেলে শিশু-কিশোর মেলা, গান ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গণ। পাঁচ শতাধিক ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী অংশ নেন এ আয়োজনে। মাতৃসম্মেলনের উদ্বোধন করেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মনিষা চক্রবর্তী। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন করেন চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গের সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ইতু দাশগুপ্তা। অতিথি ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা বিশ্বাস। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শ্রীমতি অনিন্দিতা চক্রবর্তী। অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন চিকিৎসক শ্রীমতি সোমা চৌধুরী ও শ্রীমতি পাপিয়া চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শ্রীমতি ঝিনু প্রভা দাশ (স্বস্ত্যয়নী)। সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রীমতি নয়নমনি দাশ। স্বাগত বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ।