
পূজার প্রস্তুতি দেখতে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, HindusNews :
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মন্ডপে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি জোরদার হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
মন্ডপে গিয়ে জেলা প্রশাসক পূজার প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, প্রতিমা নির্মাণের অগ্রগতি এবং নারী-পুরুষ পূজার্থীদের আসন বিন্যাসসহ খুঁটিনাটি বিষয় খোঁজখবর নেন। এ সময় তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষ, পুরোহিত, আয়োজক ও ব্রহ্মচারীদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, পূজা চলাকালীন সময়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সাধারণত মন্ডপে আসলেও পূজার প্রস্তুতি পর্বে জেলা প্রশাসকের সরাসরি মাঠে নামা এই প্রথম।
মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী অভিজিৎ রায় বলেন, “এই জেলা প্রশাসক খুবই আন্তরিক ও ভালো মানুষ। আমরা খুবই উৎসাহিত যে তিনি নিজে আমাদের মন্দিরে এসেছেন। আমার জানা মতে, এর আগে কোনো জেলা প্রশাসক পূজার প্রস্তুতি দেখতে আসেননি।”
কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস জানান, গত বছর জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসেছিলেন। এবার জেলা প্রশাসক নিজেই উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থাপনা নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।
পুরোহিত শ্রী দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, “আমি পাঁচ বছর ধরে এই মন্দিরে আছি। কখনও দেখিনি একজন জেলা প্রশাসক প্রস্তুতি দেখতে সরাসরি এসেছেন। তিনি খুবই সিরিয়াস ছিলেন, বিশেষ করে নিরাপত্তা নিয়ে।”
শ্রী শ্রী বন্ধু আশ্রমের অধ্যক্ষ ব্রহ্মচারী সেন্টু মজুমদার বলেন, “পূজার সময় অনেকেই আসেন, কিন্তু প্রস্তুতি দেখতে জেলা প্রশাসকের আগমন এই প্রথম।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সাংবাদিকদের জানান, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। পূজার ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। আনসার, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনী নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে।”
তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে প্রতিটি মন্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে অসচ্ছল মন্ডপগুলোকে মোট ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক সতর্ক করে বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো গুজব বা ছোটখাটো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূজা চলাকালীন শুধু আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখতে হবে।
তিনি জেলার সব মন্দির কমিটি, পূজার আয়োজক ও ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানান—ধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখে আনন্দমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপন করার জন্য।