
শতবর্ষের চলাচলের সড়ক দখল করে দ্বিতল বাড়ী: লোহাগাড়ায় শতাধিক সনাতনী পরিবার দুর্ভোগে
অর্পন কর্মকার,চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কর্মকার পাড়ায় শত বছরের পুরোনো একটি সরকারি রাস্তা দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক পরিবারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার ফলে প্রায় শতাধিক সনাতনী পরিবারের দৈনন্দিন যাতায়াত এবং স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান লোহাগাড়া কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পরও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো কার্যকর সমাধান না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লোহাগাড়ার সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মকার পাড়ার এই রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মানুষ চলাচল করে। ২০২২ সালে মৃত সুধাংশু কর্মকারের ছেলে সুভাষ কর্মকার ও উত্তম কর্মকার এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির মূল অংশ দখল করে বাড়ী নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তারা রাস্তার মাঝখানে চারটি পিলার স্থাপন করে বাড়ি নির্মাণ করায় পুরো এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এই রাস্তাটি গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের চলাচল, মন্দিরে যাতায়াত এবং জরুরি প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। রাস্তাটি বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি সেবাবাহী যানবাহনসহ একটি রিকশাও গ্রামে প্রবেশ করতে পারছে না, যা যেকোনো প্রাকৃতিক বা দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগের সময় বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি বিনোদ কর্মকার জানান, তিনিসহ আরও ১২ জন বাসিন্দা ২০২২ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগের পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই সুযোগে অভিযুক্তরা তাদের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেন। পরবর্তীতে ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শুধুমাত্র বাড়ির সানশেড ভেঙে দিলেও মূল পিলারগুলো অক্ষত থাকে, যার ফলে দুর্ভোগের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সাহারঞ্জন কর্মকার অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত সুভাষ ও উত্তম কর্মকার এবং তাঁদের মা পারমী বালা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় গ্রামবাসীকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এই হুমকির মুখেও গ্রামবাসীরা তাদের শত বছরের পুরোনো রাস্তা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে তারা আবারও ইউএনও বরাবর একটি নতুন আবেদন জমা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি রাস্তা দখলের পেছনে বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কথিত নেতা মৃদুলের সহযোগিতা ও প্রভাব রয়েছে। গ্রামবাসীর মতে, মৃত শুধাংশু কর্মকারের স্ত্রী পারমী বালা এবং তাঁর সন্তান সুভাষ ও উত্তম অত্যন্ত লোভী প্রকৃতির। পূর্বেও তারা বিনোদ কর্মকারের পারিবারিক রাস্তা দখল করে সেখানে সেপটিক ট্যাংক স্থাপন করেছিলেন। সে সময় থানায় অভিযোগ করা হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এবং সুভাষ কর্মকার ও উত্তম কর্মকার তাদের সৎ ভাইয়ের জায়গা জোরপূর্বক দখল করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে সুভাষ কর্মকার প্রবাসে থাকলেও উত্তম কর্মকার ও পারমী বালা নিজ বাড়িতে অবস্থান করে প্রতিবাদকারীদের ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে গ্রামের মানুষ ভয়ে ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। পারমী বালা অভিযোগকারীদের দেখলেই অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। গ্রামবাসী এখন প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে যেন এই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয় এবং দোষী সুভাষ কর্মকার, উত্তম কর্মকার ও পারমী বালার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।