
দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবারও প্রস্তুত সশস্ত্র বাহিনী।
ঢাকা প্রতিনিধি, HindusNews :
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন নিশ্চিতে সারা দেশে পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় এবারও সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাই সেনাবাহিনীর লক্ষ্য।
গত বছর ১১ অক্টোবর রমনা কালীমন্দির পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান বলেন, “সেনাবাহিনী দেশব্যাপী পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সময় প্রস্তুত ও তৎপর রয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে, সেটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমরা অতীতের মতোই সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখব এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর কালের কণ্ঠকে বলেন, “সেনাপ্রধান এবারও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসবেন বলে আমাদের কথা দিয়েছেন। আগামী ২৮ বা ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি আসতে পারেন বলে আশা করছি।”
গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ উপলক্ষে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “এ বছর পূজামণ্ডপ ও দুর্গাপূজার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীও নিয়োজিত থাকবে। এবার দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি নেই। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সারা দেশে পূজা উদযাপিত হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বলেন, “আমরা চাই না নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে ধর্ম পালন করতে। আমরা চাই নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে। এ অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।”
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর জানান, “পরিবেশ মোটামুটি ভালো। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কিছু ঘটেনি। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্বৃত্তরা সব সময়, সব উৎসব অনুষ্ঠানেই অপকর্মের অপচেষ্টা করে। আমরা আশা করব, এ ধরনের অপচেষ্টার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জায়েদুর রহমান (অব.) বলেন, “দুর্গাপূজা আমাদের দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এ সময় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য বিভিন্ন অশুভ শক্তি সক্রিয় হতে পারে। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’—এই বার্তাটি বাংলাদেশের জনগণ বুকের ভেতর লালন করে। তাই পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের স্বার্থেই নয়, বরং সামগ্রিক জাতীয় ঐক্য, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যও অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছর সেনাপ্রধান নিজে তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছিলেন, যা জনগণের মধ্যে গভীর আস্থা তৈরি করেছিল। সেনাবাহিনী সব সময়ই নিরপেক্ষ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে আস্থা অর্জন করেছে। তারা মাঠে থাকলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
সেনাপ্রধানও বহুবার বলেছেন, “এই বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিতে, সম্প্রীতিতে বসবাস করে আসছে। এই দেশ সবার। সবাই একসঙ্গে এই দেশে সুন্দরভাবে ও শান্তিতে বসবাস করব। এখানে কোনো জাতি-ধর্ম-গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। সবাই আমরা এ দেশের নাগরিক। প্রতিটি ক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার রয়েছে। সেভাবেই আমরা আমাদের সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।”