
নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে চাই না: সুব্রত চৌধুরী
ঢাকা প্রতিনিধি, HindusNews :
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, “আমরা কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে চাই না। সেটা দুর্গাপূজা হোক বা ঈদে মিলাদুন্নবী হোক।”
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি) আয়োজিত ‘দুর্গাপূজার নিরাপত্তা: অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর, বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্রের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটলেও এর বিচার হয়নি। বরং দেশে “বিচারহীনতার সংস্কৃতি” তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছিল, আর এখনো সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওয়াজ মাহফিলে আলেমরা মানুষকে পূজার সময় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সচেতন করছেন—এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে শুধু ওয়াজ নয়, মসজিদের খুতবায়ও সম্প্রীতির বার্তা উচ্চারিত হওয়া জরুরি।
ঐকমত্য কমিশন প্রসঙ্গে সুব্রত চৌধুরী বলেন, জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে কমিশন গঠিত হয়েছে তাতে বহু রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আলোচনায় নেতৃত্বদানকারীদের সঙ্গে গণমানুষের সম্পর্ক নেই। স্বাধীনতার পর থেকেই সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ বিমাতাসুলভ; অথচ ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবসহ আন্তর্জাতিক মহল প্রত্যাবাসনের কথা বললেও উল্টো নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঘটছে। ফলে সীমান্ত পরিস্থিতিও জটিল আকার ধারণ করেছে।
এ সময় তিনি গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি জানান।
আলোচনায় বিএসপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতিত হয়ে আসছে। পাকিস্তানে “শত্রু সম্পত্তি আইন” বাতিল হলেও বাংলাদেশে তা “অর্পিত সম্পত্তি আইন” নামে বহাল রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘুরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেও তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয়নি। তার অভিযোগ, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমলেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, অথচ কোনো ঘটনার বিচার হয়নি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা দুর্গাপূজার নিরাপত্তা জোরদার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।