
পাখির আবাসস্থল সুরক্ষার বার্তা নিয়ে শেরপুরে ব্যতিক্রমী দুর্গামণ্ডপ
শেরপুর প্রতিনিধি :
প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ, পাখি সুরক্ষা ও পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে শেরপুরে একটি ব্যতিক্রমী দুর্গামণ্ডপ সাজিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন মার্চেন্ট ক্লাব। শহরের কালিরবাজার মা ভবতারা কালিমন্দির চত্বরে স্থাপিত এই পূজামণ্ডপটি ইতোমধ্যে দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
অর্ধশতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী মার্চেন্ট ক্লাব এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে ৫২তম বছর পূর্ণ করছে। সেই ধারাবাহিকতায় তারা এবারের পূজামণ্ডপকে পাখির আবাসস্থল সুরক্ষা এবং প্রকৃতি রক্ষার থিমে সাজিয়েছে। মণ্ডপটি পরিত্যক্ত বাক্স, কার্টনের কাগজ, নারকেলের ছোবড়া, পাট ও কাঠের গুড়াসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব উপাদানে নির্মিত। প্রবেশপথে পাখির পালকের মোটিফ এবং ভেতরে বাবুই পাখির বাসার আদলে নির্মিত কাঠামোতে দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীর দেবী দুর্গাসহ প্রতিমাগুলো স্থাপন করা হয়েছে। মণ্ডপের তিন পাশে পরিত্যক্ত বাক্স ও কাগজে তৈরি করা হয়েছে পাখির বাসা এবং শত শত কাগজের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে এমন চিত্রায়ণও দর্শকদের দৃষ্টি কাড়ছে। পুরো মণ্ডপটি যেন এক মায়াময় পাখিরাজ্য, যেখানে ঢুকলেই কল্পনায় ভেসে ওঠে কিচিরমিচির ধ্বনির সমারোহ।
এই ব্যতিক্রমী মণ্ডপটি তৈরি করেছেন স্থানীয় তরুণ প্রতিমা শিল্পী দুই ভাই গৌড় মালাকার ও নিতাই মালাকার। তারা জানিয়েছেন, প্রকৃতিই আমাদের মা, দেবী দুর্গাও প্রকৃতির প্রতীক। তাই এবারের থিম ‘পাখি সংরক্ষণ, মানে প্রকৃতি সংরক্ষণ’। বনায়ন বাঁচানো আর পাখির আবাসস্থল রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় ও দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে তারা এই মণ্ডপটি তৈরি করেছেন।
মার্চেন্ট ক্লাবের তরুণ ব্যবসায়ী রবীন্দ্র নাথ বসাক বলেন, “পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। নগর সভ্যতার কারণে আমরা নিজেরাই পাখির আবাসস্থল নষ্ট করেছি। আমাদের এ পূজামণ্ডপের মাধ্যমে আমরা বার্তা দিতে চাই, পাখি ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।” শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সভাপতি সুজয় মালাকারও এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, মার্চেন্ট ক্লাব বরাবরই থিমেটিক পূজামণ্ডপ তৈরি করে, তবে এবারের থিমটি পাখি ও পাখির আবাসস্থল সুরক্ষা এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের বার্তা দিয়ে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মহালয়ার পর থেকেই পূজামণ্ডপটি এক নজর দেখতে কালিমন্দিরে ভিড় করছেন পুণ্যার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থীরা। ষষ্ঠীপূজা থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত উপচেপড়া ভিড় হবে বলেই মনে করছেন আয়োজকরা। দর্শনার্থীরা বলছেন, ধর্মীয় পূণ্যকর্মের পাশাপাশি প্রকৃতি ও পাখি রক্ষার এই থিম তাদেরকে সচেতন করছে এবং ভাবনার খোরাক যোগাচ্ছে।