
পূজার আগে বাড়ল মাছের দাম, সবজির বাজারও লাগামছাড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির সঙ্গে মাছের দামও বেড়েছে। শুক্রবার ছুটির দিনে মহাখালী, সাততলা ও নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই অল্প কিছু বাদে প্রায় সব সবজির দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে রয়ে গেছে, আর মাছের বাজারেও দাম বাড়তি।
মহাখালীর সাততলা বাজারে জুমার নামাজের পর বাজার করতে এসেছিলেন ভ্যানচালক সাহেব আলী। পাঙাশ মাছের দরদাম করে গজরাতে গজরাতে বাজার থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। উত্তেজিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি HindusNews-কে বলেন, “পাঙাশ মাছ এডি চাষের। তিন দিন আগে নিছিলাম ১৭০ টেকা কইরা। এখন ২০০ টেকা চাইতাছে। কিনলাম না তোর মাছ! যেই দাম জিনিসপত্রের! দুই-চাইরটা জিনিসের দাম কম। বাকি সব কিছুরই তো ম্যালা দাম। বাজারের লগে তাল মিলাইতেই তো কষ্ট হয়া যাইতাছে।”
সবজির বাজারে এখনও তাপ কমেনি। কাঁকরোল, ঝিঙা, কচুর লতি, পটল, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। করলা, বরবটি ও বেগুন প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। শিম মানভেদে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে লাউ ৫০ থেকে ৮০ টাকা প্রতিটি, মুলা ৮০ টাকা কেজি, ছোট ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি, কাঁচামরিচ কেজিতে ২০০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা। লেবুর হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ধনেপাতা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, চালকুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি এবং মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
বাজারে শাকসবজির দামও বাড়তি। লালশাক ২৫ টাকা প্রতি আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ডাটাশাক দুই আঁটি ৪০ টাকা। নাপা আর ঢেঁকি শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি আঁটি। সাততলা বাজারের বিক্রেতা সেলিনা বেগম বলেন, “শীতকালের সবজি ঢুকতে শুরু করলেই দাম কমবে। এখন দামটা একটু বেশি। আমাদেরও বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।”
অনেকদিন ধরেই কম দামে থাকা আলু আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা হলেও এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) কিনলে ৭৫ টাকায় দিচ্ছেন অনেক বিক্রেতা।
মাছের দামও বেড়েছে
বাজারে ছোট সাইজের (১৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম) ইলিশ মাছের সরবরাহ বেশি হলেও দাম চড়া। এক কেজি থেকে কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ২ হাজার ৩০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা, ২০০–২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বাজারভেদে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, আর এর চেয়ে ছোট আকারের ইলিশ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন বরফে রাখা এসব ছোট ইলিশে আসল স্বাদ নেই।
কাতল এক কেজির বেশি ওজনের ৩৫০ টাকা, এর কম ২৮০ টাকা, রুই এক কেজির বেশি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, তার কম ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। পাঙাশ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ টাকা, হাইব্রিড তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আইড় ৮০০ টাকা। বড় আকারের পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি আকারভেদে ৬৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চাষের কই ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মলা মাছ ৪০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৮০০ টাকা, বড় বেলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ছোট বেলে ৮০০ টাকা, সরপুঁটি ২২০ টাকা, মাঝারি আকারের রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি।
মহাখালী কাঁচাবাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সুলতান আহমেদ বলেন, “গেল সপ্তাহে রুই মাছ নিয়েছিলাম ২৮০ করে; এক কেজি ৯০ গ্রাম ওজন ছিল। আজ বলছে, তিনশ’র কমে হবে না। মাছের দামটা একটু বাড়তিই।”
কেবল মাংস-মুরগির দাম বাজারে স্থিতিশীল আছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা। গরুর মাংস ৭২০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসি ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি। খামারের মুরগির ডিমের ডজন ১৪০ টাকা।
সবমিলিয়ে দুর্গাপূজার আগে রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবজি আর মাছের দাম বাড়তি থাকায় ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। ক্রেতারা বলছেন, সরকারের উচিত দ্রুত বাজার পরিস্থিতির প্রতি নজর দেওয়া।