
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তী আজ: বাঙালির নবজাগরণের অগ্রদূতকে স্মরণ
HindusNews ডেস্ক
আজ, ২৬ সেপ্টেম্বর, বাঙালির নবজাগরণের অগ্রদূত, সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ ও মানবপ্রেমী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তী। ১৮২০ সালের এই দিনে মেদিনীপুর জেলার বিড়োল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন তিনি। অতি শৈশবেই তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছিল দারিদ্র্য ও নানা প্রতিকূলতা। কিন্তু অদম্য অধ্যবসায় ও অনন্য মেধার জোরে সংস্কৃত কলেজে অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করে পান “বিদ্যাসাগর” উপাধি।
বাংলা গদ্যের নবযুগের সূচনাকারী হিসেবে বিদ্যাসাগর অসামান্য অবদান রাখেন। বাংলা গদ্যকে অলঙ্কারমুক্ত, সহজবোধ্য ও প্রাঞ্জল রূপ দেন তিনি, যাতে সাধারণ মানুষও বাংলা পড়তে-লিখতে সক্ষম হয়। শিশু শিক্ষার জন্য তাঁর অমর সৃষ্টি “বর্ণপরিচয়” আজও প্রাথমিক শিক্ষার মূল ভিত্তি। এছাড়া ব্যাকরণ, সংস্কৃত ভাষার অনুবাদ ও বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনার মাধ্যমে তিনি শিক্ষাবিস্তারে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার প্রসারে ছিলেন পথিকৃৎ। কন্যাশিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি নারীর জন্য আলোর পথ খুলে দেন। তাঁর আরেকটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ছিল বিধবা বিবাহ আইন চালু করানো। দীর্ঘ আন্দোলন ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ সরকার এই আইন পাশ করে, যা অসংখ্য নারীর জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
তিনি শুধু বিধবা বিবাহ নয়, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। সমাজের অন্ধ কুসংস্কার ও প্রথার বিরুদ্ধে তিনি সত্য, যুক্তি ও মানবতার পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, যদিও এজন্য রক্ষণশীল মহলের প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
শিক্ষাবিদ ও সংস্কারকের পরিচয়ের বাইরে বিদ্যাসাগর ছিলেন এক মহান মানবতাবাদী। তিনি দুঃস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতেন, গরিবের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন, অসহায় বিধবা ও এতিমদের জীবনযাপনের জন্য অর্থব্যয় করতেন। বলা হয়, নিজের আয়-উপার্জনের সিংহভাগ তিনি ব্যয় করতেন অন্যের কল্যাণে।
বিদ্যাসাগরের অবদান শুধু উনবিংশ শতকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; আজও তাঁর ভাবনা ও কর্ম সমান প্রাসঙ্গিক। নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আজকের সমাজেও সমানভাবে প্রয়োজনীয়। তাঁর শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—শিক্ষা ও সংস্কারের আলোই অন্ধকার দূর করার একমাত্র পথ।
আজ তাঁর জন্মদিনে সমগ্র দেশ, বিশেষত বাঙালি সমাজ, তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সামাজিক মঞ্চে বিদ্যাসাগরের জীবন ও কর্মের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।