
দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে ক্রেতাশূন্য বান্দরবানের রুমা বাজার, চরম হতাশায় ব্যবসায়ীরা
অর্পণ কর্মকার, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি, HindusNews :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার ঠিক আগে বান্দরবানের রুমা উপজেলা বাজারে ক্রেতাশূন্যতার দৃশ্য দেখা গেছে। উৎসবকে ঘিরে বাজারে বেচাকেনার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। এ কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও ঋণের বোঝা বৃদ্ধির উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার সকালে রুমা বাজারের চিত্র ছিল হতাশাজনক। বিশেষ করে কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সমাগম একেবারেই নেই। দোকান মালিক ও কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ মোর্শেদ (৪৫) ও ওসমান বলেন, “দুর্গোৎসব আসন্ন হলেও দোকানে ক্রেতা আসে না, বেচাকেনা না হলে চলবে কেমন করে?”
মা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মিটু দাশ জানান, শাড়ি কিংবা থামিং-লুঙ্গি কিছুই বিক্রি হচ্ছে না, বরং ক্রমাগত ঋণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
আরেক কাপড় ব্যবসায়ী সাধন বড়ুয়া বলেন, “গত বছর এই সময়ে দোকানে এত ভিড় ছিল যে, ভাগিনা ও স্ত্রীকেও সহযোগিতা করতে হয়েছে। এখন দোকানে আমি একাই বসে আছি, ক্রেতা নেই। ব্যবসা চালাতে গিয়ে চার থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ হয়ে গেছে।”
ব্যবসার এই মন্দা সরাসরি স্থানীয় বাসিন্দাদের কেনাকাটার ওপরও প্রভাব ফেলেছে। রুমা বাজার সংলগ্ন লেমুঝিরি পাড়ার বাসিন্দা সুভাষ সরকার জানান, পরিবারে চারজন সদস্য থাকলেও তিনি ও তাঁর স্ত্রী দুর্গাপূজা উপলক্ষে কোনো কেনাকাটা করেননি। শুধুমাত্র ছেলে-মেয়েদের জন্য সীমিত কিছু কেনা হয়েছে।
একই কথা জানান সপ্নারাণী (৪২)। তিনি বলেন, স্বামীর এখন কোনো ব্যবসা নেই, আয় রোজগার নাই। ফলে নিজের জন্য কিছু না কিনে শুধু মেয়ের জন্য জামা কাপড় কিনেছেন তিনি।
তবে, ইত্যাদি স্টোরের ম্যানেজার খোকন কিছুটা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “সকাল ১০টা আর বিকাল ৩টার পর মোটামুটি বেচাকেনা হয়। বিশেষ করে ৩০ বছরের বেশি বয়সী নারীরা জর্জেট, লিলেন, পপলিন কাপড় ও শাড়ি বেশি কিনছেন।”
যদিও দুর্গাপূজার কেনাকাটা এবার জমেনি, তবুও ব্যবসায়ীরা সামনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা বা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (৬ অক্টোবর) এবং সাপ্তাহিক বাজারকে ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন।
এদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে কোনো কমতি রাখছে না রুমা। উদযাপন কমিটির সভাপতি রাজিব দাশ জানান, শনিবার থেকে রুমায় জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে টানা তিন দিনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। একইসাথে, হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের উৎসব এবং সরকারি ছুটির কারণে পর্যটকের আগমনের আশায় টুরিস্ট গাইডের সদস্যরাও প্রস্তুতিতে সরব রয়েছেন।