
চাঁদপুর-মতলবে শীতলা মন্দিরের জমি দখলকে ঘিরে উত্তেজনা: মানববন্ধন ও পুলিশের তদন্তে ভিন্ন চিত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক, –
চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর পৌরসভা এলাকায় প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন শ্রীশ্রী শীতলা ও কালী মন্দিরের জমি দখল এবং মন্দির কমিটির সদস্যদের হয়রানির অভিযোগে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি তদন্তে ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে ব্যক্তিগত জমি সংক্রান্ত বিরোধকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিণত করার অপচেষ্টা প্রতীয়মান হয়েছে।
মন্দির কমিটির অভিযোগ: হামলা, ভাঙচুর ও হুমকি
গত ১৯ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে নারায়ণপুর পৌরসভা এলাকায় অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে রবি দেবনাথ, বলাই দেবনাথ, চন্দন দেবনাথ ও নগেন্দ্র দাস অভিযোগ করেন যে, দেলোয়ার হোসেন দেলু, মুজিব ও শরিফুল্লা গং মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ও স্থাপনা ভাঙচুর করেছেন। তারা আরও জানান, অভিযুক্তরা মন্দিরের গাছপালা কেটে জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। বক্তারা দাবি করেন, ভূমিদস্যুরা ব্রজলাল দেবনাথ ও অঞ্জলি দেবনাথকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়েছেন, যার ফলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনযাপন করছেন এবং ভয়ে মন্দিরে পূজা-অর্চনা চালিয়ে যেতে পারছেন না। তারা দখলকৃত জমি দ্রুত উদ্ধার ও পূজা-অর্চনার নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানান।
পুলিশের তদন্ত: ব্যক্তিগত বিরোধকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা
এদিকে, মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ এই ঘটনা সংক্রান্তে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। পুলিশ বিভাগের পোস্টে জানানো হয়েছে যে, চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানাধীন উত্তর বাড়ৈগাঁও সাকিনে ব্রজলাল দেবনাথের বাড়ির সামনে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্রজলাল দেবনাথের সাথে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেনের বিরোধ চলছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ব্রজলালের পুত্র রবি দেবনাথ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে দেলোয়ার হোসেন গং তাদের মন্দিরের জায়গা দখল ও প্রতিমা ভাঙচুর করেছে মর্মে অপপ্রচার করেন।
মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশের নজরে আসার পর অফিসার ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় দেলোয়ার হোসেন গং-এর পক্ষে স্থানীয় শরীফ উল্যাহ বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রেক্ষিতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির ছত্রছায়ায় ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে বিরোধীয় বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিণত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও অপপ্রচারমূলক মানববন্ধন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিমা ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকৃত সংবাদ প্রচারের অনুরোধ জানিয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকের ভাষ্য: মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের চেষ্টা
স্থানীয় সাংবাদিক সমীর ভট্টাচার্যও তার ফেসবুকে এই ঘটনা নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মতলবে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার পোস্টে পুলিশের তদন্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে ব্রজলাল দেবনাথ গংদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিরোধকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দেলোয়ার হোসেনের সাথে ব্রজলাল দেবনাথের দীর্ঘদিন ধরে জমির বিরোধ চলে আসছে এবং এই বিরোধের জের ধরেই মানববন্ধন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
পূজা উৎযাপন পরিষদ যা বলছেন :
হিন্দুস নিউজ এর সাথে ফোন আলাপে পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জানান এখানে কোন প্রতিমা ভাঙার ঘটনা এখন ঘটেনি।এ মন্দিরে শীতলা পূজা হতো আরো কয়েক বছর আগে।নিজের স্বার্থ হাছিলের জন্য এটিকে সাম্প্রদায়িক মানব বন্ধনের রুপ দিয়েছে। আমরা মতলবাসী এ ধরনের সাংস্কৃতিতে কখনো বড় হয়নি।এসব তথ্য বানোয়াট ও ভূয়া।
উত্তেজনা ও প্রশাসনের নজরদারি
এই ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। প্রকৃত সত্য উদঘাটন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।