
জমে উঠেছে দেশের একমাত্র ঢাকের হাট
HindusNews ডেস্ক, কিশোরগঞ্জ :
দুর্গাপূজা সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বসেছে দেশের একমাত্র এবং ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। হাটজুড়ে বাদ্যযন্ত্রের সুর আর উৎসবের আমেজে মুখরিত হয়ে উঠেছে এলাকা। পুরানবাজার এলাকায় সোমবার বিকেলে শুরু হওয়া এই অনন্য হাট শনিবার পর্যন্ত চলবে। নাম ঢাকের হাট হলেও এখানে ঢাক বা বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচা হয় না; বরং দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বাদ্যযন্ত্রী ও ব্যান্ড দলগুলো পূজার আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন পূজা চলাকালীন বাজনার জন্য।
হাটজুড়ে নেচে-গেয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করছেন বাদকরা। ঢাক ছাড়াও ঢোল, ড্রাম, বাঁশি, সানাই, মন্দিরা, কাঁসি, ঝনঝনি সহ বাহারি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন যন্ত্রীরা। বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীরা এসেছেন ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের নানা জেলা থেকে। ঢাকিদের দক্ষতা অনুযায়ী চুক্তিমূল্য নির্ধারিত হচ্ছে। একেকজন ঢাকী ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার, বাঁশিবাদক ৫ থেকে ৭ হাজার, ছোট ব্যান্ডদল ১৫ থেকে ২০ হাজার এবং ৭/৮ জনের বড় ব্যান্ডদল ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় চুক্তি পাচ্ছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, ষোলো শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজা নবরঙ্গ রায় চৌধুরী চারিপাড়ার রাজপ্রাসাদে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। সেই পূজায় বাজনার জন্য বিক্রমপুর থেকে যন্ত্রীদের খবর পাঠানো হয়। পূজার আগে কটিয়াদীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যন্ত্রীরা জমায়েত হতেন, আর রাজা নিজে সেরা দলটি বেছে নিতেন। সেখান থেকেই শুরু হয় ঢাকের হাটের প্রচলন। পরবর্তীতে এ হাট স্থানান্তর হয় কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছমহাল এলাকায়।
কটিয়াদী পূজা উদযাপন পরিষদ ফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সাহা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা শুরুর আগের ৩ থেকে ৫ দিন এই হাট বসে এবং পূজা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যন্ত্রীরা আসেন এবং আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান। পূজার আগেই ঢাকের হাটে ঢাক-ঢোলের তালে তালে সারা এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর এই অনন্য ঢাকের হাট আজও বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় উৎসবের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত।