দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১৬ দফা দাবি জানাল ‘ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র–জনতা’

2 week ago
VIEWS: 382

HindusNews ডেস্ক :

রাজধানী ঢাকায় ‘ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র–জনতা’ নামে একটি সংগঠন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের কাছে ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে। সম্প্রতি এক পথসমাবেশে সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি পেশ করেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি বহু ধর্মাবলম্বীর দেশ। কিন্তু দুর্গাপূজাকে সার্বজনীন উৎসব হিসেবে ঘোষণা করা এবং নানা ক্ষেত্রে সরকারি সুবিধা দেওয়া অন্য ধর্মের প্রতি ‘অবমাননা’ হিসেবে তারা দেখছেন। এই প্রেক্ষাপটে তারা পূজা উদযাপনকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সংগঠনটির ঘোষিত ১৬ দফা দাবিতে মূলত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উঠে এসেছে—

১। ধর্ম যার যার, উৎসবও তার তার। পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এটা সার্বজনীন অনুষ্ঠান নয়। দুর্গা পূজাকে সার্বজনীন দাবী করা অন্য ধর্মের অবমাননা। তাই কোন মন্দিরে দুর্গা পূজাকে সার্বজনীন উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলানো যাবে না।

২। রাস্তা বন্ধ করে যত্রতত্র পূজা করা চলবে না। মন্দিরের ভেতরেই পূজা করতে হবে, মন্দিরের বাইরে রাস্তায় মণ্ডপ বানিয়ে কিংবা পূজার মিছিল রাস্তায় আনা যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কোন পূজামণ্ডপ তৈরি করা যাবে না, পূজাও করা যাবেনা।

৩। জনবিরক্তি তৈরি করে এমন কোন কাজ করা যাবে না। মন্দিরে মাইক বাজানো, ডেক সেট বাজানো, ডিজে পার্টি করে শব্দ দূষণ করা যাবে না। রাতভর শ্লোক আর্তি করা যাইবো না মাইকে।

যত্রতত্র পূজার ব্যানার-পোস্টার লাগানো চলবে না।

৪। মদ বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ। তাই পূজাকে কেন্দ্র করে কোন মন্দিরে মদ খাওয়া চলবে না।

৫। কোনো মন্দিরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সংখ্যক মূর্তি বানানো কিংবা মূর্তির ইচ্ছামত উচ্চতা দেয়া চলবে না।

৬। মূর্তিতে এমন কোন উপাদান ব্যবহার করা যাবে না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। মূর্তিতে পরিবেশ দূষণকারী কোন উপদান ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা তদাকরীর জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৭। পানি দূষণ হয় বিধায় ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের কোথাও উন্মুক্ত পানিতে পূজা শেষে মূর্তি ডুবাতে দেয়া হয় না। খোদ ভারতেও অনেক রাজ্যে উন্মুক্ত পানিতে মূর্তি ডুবনো নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশে যত্রযত্র নদী, পুকুর, খাল, বিলে পূজার মূর্তি ডুবিয়ে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ করা হয়। মূর্তির উপাদান পঁচে গিয়ে পানি দূষণ করে, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যায়। অনেকসময় এই বিষাক্ত মাছ খেয়ে মানুষও মারা যায়। পানিদূষণ রোধ করতে তাই উন্মুক্ত পানিতে পূজার মূর্তি ডুবানো নিষিদ্ধ করতে হবে।

৮। ত্রাণের টাকা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যবহৃত হবে, পূজার জন্য নয়। অথচ আওয়ামীলীগের আমলে ত্রাণ তহবিলের টাকা হতে মণ্ডপ প্রতি ৫০০ কেজি করে প্রায় ৩২ হাজার মণ্ডপে চাল দেয়া হতো। এটা বন্ধ করতে হবে। ত্রাণের টাকা ত্রাণের জন্য রাখতে হবে, কোনোমতেই ত্রাণের অর্থ পূজায় দেয়া চলবে না।

৯। দুর্গাপূজার ছুটি সাধারণ নয়, বরং ঐচ্ছিক করতে হবে। জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ২ ভাগের কম হিন্দু ধর্মাবলম্বীর জন্য শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে কর্ম থেকে দূরে রেখে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা চলবে না।

১০। পূজা উপলক্ষে কোনরূপ চাঁদাবাজি করা চলবে না। পূজার জন্য কোন মুসলমান থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নেয়া যাবে না, কারণ মুসলমানদের জন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজায় আর্থিক অংশগ্রহণ করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। এটা সম্পূর্ণ হারাম

১১। রাস্তায় পূজার তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। কারণ পূজার তোরনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেব-দেবীর ছবি থাকে। সেই দেব-দেবীর ছবির নিচ দিয়ে মুসলমানদের যাতায়াত করা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।

১২। পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। তাই সেই অনুষ্ঠানে যেন কোন মুসলমান ব্যক্তি প্রবেশ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পূজার প্রসাদ মুসলমানদের খাওয়া হারাম। তাই পূজার প্রসাদ দেয়া যাবে না। পূজার পোস্টারে মুসলমানদের দিয়ে পূজার শুভেচ্ছা জানানোর মত ধর্মীয় অবমাননামূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। কোন মুসলমান এমন শুভেচ্ছা জানালে তার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

১৩। বাংলাদেশে রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ অনুসারে ইলিশ রফতানিযোগ্য কোন মাছ নয়। কিন্তু তারপরও সেই নীতিমালা ভেঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে পূজা উপলক্ষে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানির ঘোষণা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বিরোধী এ সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরকারকে সরে আসতে হবে এবং রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। জনবিরোধী এ সিদ্ধান্তকে অন্যায় স্বীকার করে সরকারকে দেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

১৪। বাংলাদেশের অনেক খাস জমি দখল করে মন্দির বানানো হয়েছে। খাস জমি থেকে সেই সকল মন্দির উচ্ছেদ অভিযান করে দ্রুত খাস জমি মুক্ত করতে হবে। সেখানে মাদ্রাসা বানাতে হবে।

১৫। অনেক মন্দিরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠায় উগ্রবাদীরা মিটিং করে বলে খবর পাওয়া যায়। কোন মন্দির এ ধরনের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ অভিযোগে অভিযুক্ত হলে সেই মন্দির বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। যে সকল হিন্দু ধর্মীয় নেতা অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বক্তব্য দিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান করতে হবে।

১৬। ‘হিন্দু মানেই ভারতের দালাল’ বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরই এ অপবাদ ঘুচাতে হবে। যেহেতু ভারত বাংলাদেশের জাতীয় শত্রু, তাই বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদেরও ভারত বিরোধীতায় সম্মতি দিতে হবে। এজন্য মন্দিরগুলোতে ভারত বিরোধী ব্যানার ও পূজার আলোচনায় ভারতবিরোধী শ্লোগান রাখতে হবে। বিশেষ করে সম্প্রতি ভারতে আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মানহানী করে হিন্দু উগ্রবাদীরা বক্তব্য দিয়ে উস্কানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দূর্গা পূজার সময় মন্দিরগুলোতে ভারতীয় উগ্রবাদীদের এই অপকর্মের নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য প্রচার করতে হবে। দায়ীদের শাস্তি চাইতে হবে।

বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমানে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অনেক অনিয়ম হচ্ছে এবং সরকারি অর্থ ও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারা মনে করেন, এসব অনিয়ম বন্ধ করতে হলে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিলেও, পূজা বা ধর্মীয় উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে এমন দাবি নতুন নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ১৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই একে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

তবে প্রশাসন ও সরকারি কোনো সংস্থা এখনো এ দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন