
সর্বশক্তির আধার দেবী দুর্গা
স্টাফ রিপোর্টার :
বাংলার দুর্গাপূজা নিছক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. সঞ্চিতা গুহ HindusNews-এ দেওয়া মতামতে জানিয়েছেন, দেবী দুর্গা কেবল দেবী নন; তিনি মহাবিশ্বের শক্তি, সৌন্দর্য ও মমতার প্রতীক। প্রায় তিন হাজার বছর ধরে চলে আসা দুর্গাপূজা মূলত একটি শাক্ত উৎসব হলেও এর বর্তমান প্রতিমাতাত্ত্বিক রূপ গড়ে ওঠে মধ্যযুগে।
ড. গুহর মতে, মার্কণ্ডেয় পুরাণের দেবী মাহাত্ম্য অংশে যে রূপের বর্ণনা রয়েছে, সেটিই বাংলার প্রতিমা নির্মাণের ভিত্তি। সেখানে দেবী মহিষাসুরকে বধ করছেন, যা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতীকী লড়াই। তিনি বলেন, “দেবীর প্রতিমার প্রতিটি অংশই একেকটি শক্তির প্রতীক। দশভুজা মা দুর্গার দশটি অস্ত্র বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রদত্ত শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।”
চক্র, ত্রিশূল, শঙ্খ, বজ্র, গদা, তীর-ধনুক, খড়্গ, ঘণ্টা, পদ্ম ও নাগপাশ—এই দশ অস্ত্রের প্রতিটি দেবীর শক্তির ভিন্ন ভিন্ন দিককে প্রকাশ করে। দেবীর বাহন সিংহ শক্তি, সাহস ও বীরত্বের প্রতীক। দেবীর সঙ্গে থাকা লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশও নিজ নিজ শক্তির আধার—যা ভক্তদের জীবনে প্রাচুর্য, জ্ঞান, শৌর্য ও বিঘ্ননাশের বার্তা দেয়।
ড. গুহ বলেন, “যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা”—এই মন্ত্র উচ্চারণে মানুষের মনে শান্তি ও একাত্মবোধের সৃষ্টি হয়। কারণ সর্বভূতে দেবীশক্তির অবস্থান করুণা, সহমর্মিতা ও ন্যায়বোধের বিকাশ ঘটায়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের মোকাবিলায় দেবী দুর্গার শক্তিরূপে অবস্থান এক মহৌষধের মতো। নারীই শক্তি, নারীর মাঝেই বিরাজমান সব শক্তির আধার—এই আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হতে পারলেই নারীশক্তি হবে জাগ্রত, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখবে।