
মুষ্টি চাল থেকে পূজার আয়োজন : শেরপুরে ২৩ নারী গড়লেন “উমা সংঘ”
নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর :
অভাব, কষ্ট আর দৈনন্দিন সংগ্রামের মাঝেও স্বপ্ন হারায়নি শেরপুর জেলা শহরের সাতানিপাড়া এলাকার ২৩ জন দিনমজুর হিন্দু নারী। দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে সন্ধ্যায় তারা জড়ো হন “উমা সংঘ” নামের এক ছোট্ট উদ্যোগে। কোনো দান নেই, কোনো তহবিল নেই—শুধু ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাস। তাই তারা ঠিক করেন, প্রতিটি পরিবার থেকে প্রতিদিন মাত্র এক মুষ্টি চাল জমা করবেন।
সেই ক্ষুদ্র দানই এক বছরে রূপ নিল মহাসঞ্চয়ে,সংগৃহীত অর্থ দাঁড়াল প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েই সাজছে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছর ছোট পরিসরে প্রথম আয়োজন করেছিলেন তারা। এ বছর সেই অভিজ্ঞতা ও সাহসকে পুঁজি করে বৃহত্তর আয়োজনে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন এই নারীরা।
“উমা সংঘ”-এর এক সদস্য জানান, “আমাদের কাছে কোনো ধনী পৃষ্ঠপোষক নেই। কিন্তু আমরা চেয়েছি আমাদের সন্তানদের সামনে একটা উদাহরণ স্থাপন করতে—যে ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভব কিছু নেই।”
এই পূজা তাঁদের কাছে শুধু ধর্মীয় আচার নয়; বরং আত্মমর্যাদা, সাহস ও স্বপ্নের প্রতীক। নারী শক্তি যখন জাগ্রত হয়, তখন কোনো অভাবই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সাতানিপাড়া এলাকায় এবার যে পূজার আয়োজন হচ্ছে তা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; বরং নারীশক্তির জাগরণের প্রতিচ্ছবি। তাদের এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই আশপাশের হিন্দু পরিবারগুলোকে অনুপ্রাণিত করছে।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বলছেন, “মুষ্টি চাল থেকে জন্ম নেওয়া এই শক্তি আমাদের শেখাচ্ছে—অল্পের মধ্যেই বড় কাজ সম্ভব। নারীর হাতে যদি সুযোগ ও সহায়তা থাকে, তবে সমাজের পরিবর্তন নিশ্চিত।”
শেরপুর আজ সাক্ষী হয়ে থাকছে মাতৃশক্তির এক ঐতিহাসিক মহাকাব্যের। “উমা সংঘ”-এর এই উদ্যোগ এ অঞ্চলে শারদীয় দুর্গাপূজার এক নতুন অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।