
নড়াইলে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির! নির্বিঘ্নে চলছে নামাজ ও পূজা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা গ্রামে এক অনন্য দৃশ্য প্রতিদিনই চোখে পড়ে। একই আঙিনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের নামাজ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে চলে আসছে। চিত্রা নদীর পাড়ে অবস্থিত মহিষখোলা পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি অফিস চত্বরেই রয়েছে দুটি পৃথক ধর্মীয় উপাসনালয়—মহিষখোলা পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ এবং মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির। প্রায় চার দশক ধরে নিয়মিতভাবে চলছে আজান-নামাজ আর পূজা-অর্চনা; এক পাশে ধ্বনিত হচ্ছে জিকির, অন্য পাশে উলুধ্বনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে মহিষখোলা পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি অফিস জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯২ সালে এর নতুন নির্মাণকাজ শুরু হয়। অন্যদিকে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির। নিজস্ব জমিতেই এই মন্দির গড়ে ওঠে। চিত্রা নদীর তীরের একটি ছোট মাঠের পশ্চিমে মসজিদ এবং উত্তরে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরের সামনের দিকে রয়েছে শরীফ আব্দুল হাকিম ও নড়াইল এক্সপ্রেস হাসপাতাল, আর দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি প্রধান সড়ক।
এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা বলেন, তারা হিন্দু-মুসলিম একই পরিবারের সদস্য হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন এবং কখনো ধর্মীয় কোনো বিরোধের মধ্যে জড়াননি। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করার পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা করে। মহিষখোলা সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভংকর সরকার ট্রুপাল জানান, এখানে মুসলমান সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি হলেও পূজা-অর্চনায় তাদের কখনোই কোনো সমস্যা হয়নি এবং সবাই মিলেমিশে বসবাস করছে। মহিষখোলা পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় জামে মসজিদের ইমাম ইনামুল ইসলাম বলেন, “আমাদের মন্দির ও মসজিদ পাশাপাশি। অতীতে কোনো সমস্যা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না ইনশাআল্লাহ।”
নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক। সম্প্রীতির ঐকতানে আমরা সাম্যের গান গাই, শুধু ধর্ম নয় মানুষ, বিদ্বেষ নয় সম্প্রীতি। তিনি আরও বলেন, হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, নড়াইলের মতো শান্তিপূর্ণ নিদর্শন দেশে বিরল। দেশপ্রেম আর ধর্মীয় চেতনা লালন করে আগামী দিনে আমরা এগিয়ে যাব—এই প্রত্যাশা করি।
নড়াইলের মহিষখোলা এলাকায় মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি থেকে নির্বিঘ্নে নামাজ ও পূজা চালিয়ে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।