
মহাঅষ্টমীতে মন্দিরে মন্দিরে অঞ্জলি, ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনে ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আজ মঙ্গলবার শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী। ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সকালে দুর্গাদেবীর বিহিত পূজা শেষে শুরু হয় অঞ্জলি প্রদান। ভক্তরা দলে দলে মন্দিরে উপস্থিত হয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা ও দর্শন করেন।
মহাঅষ্টমীর মূল আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা। সকাল ১১টায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ‘কুমারী মায়িকি জয়, দুর্গা মায়িকি জয়’ ধ্বনিতে মণ্ডপ মুখরিত হয়ে ওঠে। কুমারী দেবীকে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মণ্ডপে আনা হয় এবং প্রতিমার সামনে বিশেষ বেদি স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রপাঠ ও প্রার্থনার পর পঞ্চ উপকরণে কুমারী দেবীকে আরাধনা করেন পুরোহিতরা। বহু ভক্ত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অংশ নেন এই পূজায়। দুপুর ১২টায় পূজা সমাপ্ত হয়।
ভক্তদের স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিল মন্দির প্রাঙ্গণ। ঢাক-ঢোল, শঙ্খ, কাঁসর ও ঘণ্টার ধ্বনিতে মুখর ছিল চারপাশ। ভক্তরা উলুধ্বনি দেন, এরপর প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সহকারী সম্পাদক উত্তম মহারাজ কুমারী পূজার তাৎপর্য সম্পর্কে বলেন—
“কুমারী পূজা হলো নারীকে মাতৃশক্তির প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা জানানো। প্রতি বছর মহাঅষ্টমীতে আমরা এই পূজা আয়োজন করি। আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে, প্রতিটি নারীর মধ্যেই দেবীশক্তি বিদ্যমান। এই পূজার মাধ্যমে সেই শক্তিকে আমরা সম্মান জানাই।”
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রীরামকৃষ্ণের মতে সব স্ত্রীলোকই ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীর মধ্যে দেবীশক্তির প্রকাশ সবচেয়ে বেশি। এজন্য দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে ৫ থেকে ৭ বছরের এক কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়। চণ্ডীতেও বলা হয়েছে—
“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্য নমো নমঃ।”
মহাঅষ্টমীর পূজার পাশাপাশি রাতে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পূজা। অষ্টমী তিথির শেষ ও নবমীর শুরু—এই সন্ধিক্ষণে বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ ও আচার পালনের মধ্য দিয়ে সন্ধি পূজা সম্পন্ন হয়। যেসব মণ্ডপে কুমারী পূজা হয়, সেখানে একই দিনে তিনটি পূজা—অষ্টমী পূজা, কুমারী পূজা এবং সন্ধি পূজা—আয়োজিত হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশে মহাঅষ্টমীর দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে সৃষ্টি হয় ধর্মীয় উচ্ছ্বাস ও গভীর ভাবগাম্ভীর্যের পরিবেশ। পূজা অর্চনা, প্রার্থনা ও উৎসবের মধ্য দিয়ে মহাঅষ্টমী দিনটি উদযাপন করছে সনাতনী সমাজ।