
মৌলভীবাজারে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দুটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা, দুই মুসলিম যুবক গ্রেপ্তার
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজার জেলায় দুটি পৃথক সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনাতেই দুই মুসলিম যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একদিকে ফেসবুকে সনাতন ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি, অপরদিকে পূজামণ্ডপে ছুরি নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা—এমন ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের গাজীপুর চা বাগান এলাকায়। সেখানে মো. দুলাল নামে এক চা শ্রমিক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে সনাতন ধর্ম ও দেবদেবীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য পোস্ট করেন। পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুলালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
অপর ঘটনাটি ঘটে মৌলভীবাজার পৌর এলাকার সৈয়ারপুরস্থ আবাহনী পূজা মণ্ডপে। শনিবার দুপুরে মাস্ক পরা এক যুবককে সন্দেহজনক আচরণের কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যরা আটক করেন। তল্লাশির সময় তার কাছ থেকে একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম নাসির মিয়া। তিনি সদর উপজেলার গুজারাই (চাঁদনীঘাট) এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এবং তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায়। নাসিরের কাছ থেকে উদ্ধার করা ছুরিটি দেখে উপস্থিত পূজারী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এমকে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনার পেছনে কারও উসকানি রয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের কোনো প্রচেষ্টা সহ্য করা হবে না।”
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তারা বলেন, দুর্গাপূজার সময় এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, যা ধর্মীয় সম্প্রীতিকে নষ্ট করার অপচেষ্টা। তবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় এবার বড় কোনো অঘটন ঘটেনি।
প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্য করে নানা অপপ্রচার, হামলা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। মৌলভীবাজারের এই দুটি ঘটনা সেই একই ধারাবাহিকতার অংশ কিনা, তা নিয়েও স্থানীয়রা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নজরদারি চালানোর জন্য।