
TruthLine BD ফেসবুক পেজের ধর্ম অবমাননা: সনাতনী সম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়
HindusNews ডেস্ক রিপোর্ট :
সম্প্রতি ‘TruthLine BD’ নামের একটি ফেসবুক পেজে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অবমাননাকর পোস্ট করায় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই পোস্টে দেখা যায়, একটি প্রতিমার পেছনের দিকের ছবি তুলে সেখানে লেখা হয়েছে— “যেটার পুটকিতে বাঁ/শ না ঢুকাইলে দাঁড়াইতে পারে না ওইটা প্রভু হয় কিভাবে? বিঃদ্রঃ জানার জন্য প্রশ্ন করেছি।” এই অশালীন ও অবমাননাকর বাক্যাংশে ধর্মপ্রাণ হিন্দু সমাজ গভীরভাবে আহত হয়েছে।
পোস্টটি প্রকাশের পর মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সনাতনী সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেকেই মন্তব্য করেন যে, এটি কেবল একটি ধর্মের প্রতি নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের উপরও সরাসরি আঘাত। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন। কিন্তু এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সেই ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রতিমা কেবল একটি জড় বস্তু নয়, বরং ভক্তি, বিশ্বাস ও ঈশ্বরচিন্তার প্রতীক। প্রতিমা নির্মাণের প্রতিটি ধাপেই থাকে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও শিল্পকলার এক অনন্য প্রকাশ। সেই শিল্পকর্ম ও ভক্তিকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিদ্রূপ করা মানে কেবল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, বরং প্রাচীন সংস্কৃতি ও শিল্পেরও অপমান।
ঘটনাটি প্রকাশের পর বহু সনাতনী নাগরিক ও সংগঠন ‘TruthLine BD’ পেজটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। তাঁদের মতে, এই পোস্টের ভাষা ও উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উস্কানিমূলক, যা বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইতোমধ্যেই বহু ব্যবহারকারী ওই পেজটি রিপোর্ট করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সরকারের কঠোর ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমজুড়ে ক্ষুব্ধ সনাতনী নাগরিকরা একে একে তাঁদের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “আমরা অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমাদের দেবদেবীর প্রতি এমন অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ভগবান এক, কিন্তু তাঁর আরাধনার পথ ভিন্ন হতে পারে—এটাই আমাদের শিক্ষা।” কেউ কেউ আবার লিখেছেন, “ভাষা আমাদের চরিত্রের পরিচয় বহন করে। অন্যকে অসম্মান করে কেউ কখনো নিজে সম্মানিত হয় না।”
ধর্মীয় নেতৃবৃন্দও এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানো ও অন্য ধর্মকে অবমাননা করা এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি, যা সমাজের শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। তাঁরা বলেছেন, প্রতিটি ধর্মই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা শেখায়; কিন্তু কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
‘TruthLine BD’-এর এই পোস্ট আবারও স্মরণ করিয়ে দিল যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আজ ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর একটি সহজ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানের যে ঐতিহ্য বাংলাদেশে রয়েছে, তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা, শিক্ষা ও সর্বোপরি আইনের কঠোর প্রয়োগ।
হিন্দু সমাজের দাবী, অপরাধী বা পেজটির প্রশাসকদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ধর্মীয় অনুভূতিকে উপহাসের উপকরণে পরিণত করার সাহস না পায়। সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হলে সকলেরই উচিত ধর্ম নির্বিশেষে একে অপরের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।