
একুশে টেলিভিশনের নিউজ নিয়ে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা : সম্প্রতির নামে তৈরি হচ্ছে বিভেদ!
HindusNews ডেস্ক :
সম্প্রতি দেশের প্রথময় সারির অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম একুশে টেলিভিশন একটি সংবাদ সম্প্রচার করেছে, যেখানে একজন ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে হিন্দুধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে দেখানো হয়েছে।
সংবাদটি প্রকাশের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন প্রচার সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বাড়ানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
ঘটনাটি আরও স্পষ্ট করার জন্য বলা যায়, যিনি ওই সংবাদে উল্লেখিত হয়েছেন, তিনি মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য নন। তিনি ইতিমধ্যে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তারপরও মিডিয়ায় তাকে হিন্দুধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে দেখানো হয়েছে। এটি ধর্ম অবমাননার শামিল, কারণ তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হিন্দু ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। একুশে টেলিভিশনের সংবাদে এই বিষয়টি যথাযথ প্রেক্ষাপট ছাড়া উপস্থাপন করা হয়েছে, যা সাধারণ দর্শক ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
আইন ও ন্যায়ের দিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম অবমাননা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে যেহেতু ওই ব্যক্তি নিজে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছেন, তাই তার কর্মকাণ্ডের জন্য হিন্দু ধর্মকে দায়ী করা যৌক্তিক নয়। যদি তার আচরণ বা মন্তব্য ইসলামের মতো অন্য ধর্মকে অবমাননা করে, সেটি বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় আসে, হিন্দু ধর্মের নয়।
দেশে ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদাহরণ রয়েছে, যেখানে ধরা পড়া ব্যক্তিকে “মানসিক ভারসাম্যহীন” বা “ছেলেমানুষী” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০২১ সালের শারদ উৎসবের সময়ে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় এ ধরনের ব্যাখ্যা ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুসলিম ছাত্র কোরআন অবমাননা করেছে, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিন্দু ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই ধরনের ব্যাখ্যা বা ছাড়পত্র দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন , ধর্ম একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য তার ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মীয় উপাদান আবেগের বিষয়। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্মকে ব্যবহার করা সম্প্রতির নামে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
মিডিয়ার দায়িত্ব হলো সমাজে তথ্য ও সচেতনতা পৌঁছে দেওয়া, বিভাজন নয়। তাই ধর্মীয় বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার বন্ধ না হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা শুধুই ফাঁকা বুলি হয়ে থাকবে।
তারা আরও বলছেন, ধর্ম অবমাননার জন্য যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কিন্তু একই সঙ্গে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে, যাতে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকে।