পুরাণ ঘেঁটে অসুরদের দাড়ির স্বরূপ: এক অনুল্লিখিত অধ্যায়?

5 days ago
VIEWS: 108

HindusNews ডেস্ক :

প্রাচীন ভারতীয় পুরাণের ইতিহাসে দেবতা ও অসুরদের দ্বন্দ্ব চিরন্তন এক অধ্যায়। সেই সংঘাতের ভেতর দিয়েই উদ্ভাসিত হয়েছে ধর্ম, ন্যায়, অহংকার ও পতনের বহু প্রতীকী কাহিনী। দেবতারা যেমন সৌন্দর্য, জ্যোতি ও সদ্গুণের প্রতীক, তেমনি অসুররা অনেক সময় শক্তি, অহং এবং বিদ্রোহের প্রতিচ্ছবি হিসেবে উঠে আসে। কিন্তু পুরাণের এই বিশাল ভাণ্ডারে একটি প্রশ্ন প্রায় অনালোচিত থেকে গেছে—অসুরদের দাড়ির বর্ণনা কোথায়?

গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পুরাণগুলিতে অসুরদের রূপের অনেক বর্ণনা থাকলেও দাড়ি নিয়ে স্পষ্ট কোনো উল্লেখ খুবই বিরল। তারা প্রায়শই “ভয়ঙ্কর”, “উগ্র” বা “অপরূপ” বিশেষণে চিহ্নিত, কিন্তু দাড়ির উপস্থিতি বা প্রকৃতি নিয়ে প্রায় নীরবই থেকেছে রচয়িতারা। সম্ভবত দাড়ি পুরাণকারদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা পড়েনি। কারণ পুরাণের লেখকরা মূলত চরিত্রের কর্মকাণ্ড ও নৈতিক তাৎপর্যের ওপর জোর দিয়েছেন, বাহ্যিক বর্ণনার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে নয়।

তবে এ-ও সত্য যে, অসুরদের দাড়ি নিয়ে নীরবতা মানে তাদের দাড়ি ছিল না—এ কথা বলা যায় না। বরং এটি একধরনের বর্ণনাগত শূন্যতা, যা শিল্পীদের কল্পনায় পূর্ণতা পেয়েছে। মন্দিরের ভাস্কর্য, প্রাচীন চিত্রকলা কিংবা আধুনিক সচিত্র গ্রন্থে অসুরদের বিভিন্নভাবে দেখা যায়—কখনও ঘন কালো দাড়ি, কখনও কুঁচকানো বা এলোমেলো দাড়ি, আবার কখনও দাড়িবিহীন বা গোঁফযুক্ত মুখে। যেমন রাবণকে বহু ক্ষেত্রে দাড়িবিহীন, রাজকীয় ও সুগঠিত মুখে দেখা যায়, অন্যদিকে মহিষাসুরকে প্রায়ই বিশাল দেহী, লোমশ এবং দাড়িওয়ালা রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই ভিন্নতাগুলি দেখায়, পুরাণের বর্ণনা যতটা লিখিত, তার চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান সংস্কৃতিতে বিকশিত হয়েছে। অর্থাৎ অসুরদের দাড়ির ধারণা শিল্পীদের স্বাধীন কল্পনারই ফসল। প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকলায় অসুরদের মুখাবয়ব অনেক সময় মানুষের আদি প্রবৃত্তি, বন্যতা এবং অস্থিরতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে দাড়ি তাদের উগ্রতা, শক্তি ও অমানবিকতার চিহ্ন হিসেবেও দেখা যায়।

অতএব, পুরাণে অসুরদের দাড়ির প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকলেও এটি কোনো ত্রুটি নয়, বরং পুরাণ রচনাশৈলীরই একটি বৈশিষ্ট্য। পুরাণকাররা চরিত্রের নৈতিক গভীরতায় যেতে গিয়ে শারীরিক সৌন্দর্য বা মুখাবয়বের সূক্ষ্ম উপাদানকে গৌণ করে তুলেছেন। কিন্তু পরবর্তী যুগে চিত্রশিল্প, নাট্যরূপ ও সাহিত্য এই অনুল্লিখিত অংশকে পুনরায় জীবন্ত করে তুলেছে। ফলে অসুরদের দাড়ি শুধু একটি দেহগত বৈশিষ্ট্য নয়, বরং পৌরাণিক শিল্পে তা এক প্রতীকি অর্থে—শক্তি, অহংকার, এবং বন্য পুরুষত্বের রূপক হয়ে উঠেছে।

এইভাবে দেখা যায়, “অসুরদের দাড়ি” নিয়ে পুরাণের নীরবতা এক ধরনের সাংস্কৃতিক ইঙ্গিত বহন করে—যেখানে অনুল্লিখিতও এক অর্থে গভীরভাবে প্রকাশিত। আর সেই কারণেই, পুরাণের এই নীরব অধ্যায়ও আজ গবেষক ও পাঠকদের কাছে সমানভাবে কৌতূহলোদ্দীপক।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন