প্রবারণার ফানুসে উড়ল ফিলিস্তিন মুক্তির বার্তা।

4 days ago
VIEWS: 42

হৃদয় দাস,নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার।

কক্সবাজারের রামুতে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব ভেসে উঠেছে এক অনন্য বার্তায়— “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় এই প্রতীকী বার্তা যেন ছুঁয়ে গেল উপস্থিত সবার হৃদয়। এক দশক আগে, ২০১২ সালের সেই ভয়াল রাতে যখন রামুর বৌদ্ধ মন্দিরগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জ্বলে উঠেছিল, তখন যেন সহাবস্থানের বিশ্বাসও পুড়ে গিয়েছিল সেই আগুনে। আজ, সেই একই রামু আবার আলোকিত হলো শান্তি ও মানবতার দীপ্তিতে।

সোমবার সন্ধ্যায় রামুর সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। প্রদীপের আলো, প্রার্থনা আর ফানুস উড়ানোর সেই মনোমুগ্ধকর মুহূর্তে আকাশ ভরে উঠেছিল রঙিন আলোয়। প্রত্যেক ফানুস যেন একেকটি প্রার্থনা— কারও জন্য শান্তি, কারও জন্য ভালোবাসা, কারও জন্য মুক্তি। আর সেসব ফানুসেই এবার লেখা হয় এক গভীর মানবিক আবেদন— “ফিলিস্তিন হোক মুক্ত”।

রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংযম ও আত্মশুদ্ধির দিন। আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। তার ভাষায়, “ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করার প্রতীক। এটি শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের বার্তা দেয়। আজকের পৃথিবীতে এই আলো যেন সকল অন্ধকার দূর করে মানবতার পথ দেখায়।”

স্থানীয় সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, “রামু একসময় ঘৃণার আগুনে জ্বলেছিল, আজ সেই রামুই শান্তির প্রতীক। প্রবারণা মানে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার জয়গান। ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’— এ শুধু একটি বাক্য নয়, এটি মানুষের বিবেকের প্রতিধ্বনি।” তরুণ সমাজকর্মী ইনজামাম উল হক বলেন, “প্রবারণার ফানুস শুধু আনন্দের নয়, এটি প্রতিবাদের প্রতীকও। আমরা ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে চেয়েছি। এই আলো যেন পৃথিবীর অন্ধকারে থাকা মানুষের জন্য আশার প্রতীক হয়।” স্থানীয় যুবক অর্পণ বড়ুয়া জানান, “বৌদ্ধ ধর্মের মূল বার্তা হলো— যেখানে ঘৃণা, সেখানে আলো জ্বালাও। প্রবারণার ফানুস সেই বার্তাই আজ আকাশে ছড়িয়ে দিয়েছে।”

প্রবারণা পূর্ণিমাকে ঘিরে শুধু রামুই নয়, পুরো কক্সবাজার জেলা আলোকময় হয়ে উঠেছে। শহরের অগগমেধা ক্যায়াং, মহাশাশন বিহারসহ জেলার প্রায় প্রতিটি মন্দিরেই চলছে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা ও ফানুস উড়ানোর উৎসব। উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যার পর থেকেই জেলা জুড়ে বাড়ানো হয় টহল ও নজরদারি। কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “প্রবারণা পূর্ণিমা শান্তির উৎসব। আমরা চাই এই আনন্দময় পরিবেশে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি না ঘটে। এখন পর্যন্ত সব কিছু অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।”

একসময় যে রামু ছিল দুঃসহ স্মৃতির প্রতীক, আজ সেই রামুই আলোর উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রবারণার ফানুসের আলো যেন বলে দিচ্ছে— ঘৃণার আগুন একদিন শান্তির আলোয় নিভে যায়, আর অন্ধকার যত গভীরই হোক, মানুষের হৃদয়ের আলো তার চেয়ে উজ্জ্বল।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন