পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এ সরকারের সময়েও মিথ্যা প্রচার চলছে

4 days ago
VIEWS: 36

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সহিংসতা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এবং খাগড়াছড়ির গুইমারায় নিহতদের স্মরণে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সোমবার সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিনও তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং এই সময়ে অনেক অন্যায় আড়াল করা হয়েছে এবং মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে।

কর্মসূচিতে আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন সংগঠনের লিখিত ঘোষণা পাঠ করেন। ঘোষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনার মেডিকেল রিপোর্ট জনসমক্ষে চলে আসা গভীর উদ্বেগজনক। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন অফিস এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিক এবং ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং নিহতদের পরিবারকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে যত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তার অধিকাংশ ঘটেছিল খাগড়াছড়ি জেলায়। এমনকি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পরও অন্তত ১৬ থেকে ১৭টি গণহত্যা ঘটেছে, যার অধিকাংশই খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে। সাম্প্রতিক নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করার অর্থ হচ্ছে পার্বত্য জনগণের ভূমি অধিকার, নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের অস্বীকার করা। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও এই অস্বীকারের রাজনীতি চলতে পারে না। তাই ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবার ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা প্রয়োজন।

এএলআরডির পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি আদিবাসীদের সাধারণ নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৃত্রিম নিরাপত্তা বলয়ের ধারাবাহিকতা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় যে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামে তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। বরং সেখানে অবনতি ঘটেছে। অনেক অন্যায় আড়াল করা হয়েছে এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। উপদেষ্টারা ঘটনাস্থলে গিয়ে যে মন্তব্য দেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায় না, যা জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জাজনক।

বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন বলেন, কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো বা বিভাজন সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বরদাশত করা যায় না। দেশে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও বেসামরিক শাসন, কোথাও সামরিক শাসন—এভাবে দ্বৈত ব্যবস্থা চলতে পারে না। উসকানি সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে যারা রাজনৈতিক বা অন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাগুলো বারবার ‘নিরাপত্তা ইস্যু’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা অন্যায়। প্রায়ই সেখানে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তকমা দিয়ে মানুষের ন্যায্য প্রতিবাদ দমন করা হয়। অথচ বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদেরও সমান অধিকার রয়েছে, তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের অধিকারও রয়েছে।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট কোনো আঞ্চলিক ইস্যু নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি এখনো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলে পাহাড়ে অশান্তি ও অবিশ্বাস বেড়েছে। তাই দেশের সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও অংশীজনদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে জাতীয় সংলাপ আয়োজন এখন সময়ের দাবি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য দীপায়ন খীসা। কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন ঐক্য ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কাপেং ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

শেষে নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। উপস্থিত সবাই পাহাড়ে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার শপথ নেন।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন