
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
ঢাকা প্রতিনিধি :
সদ্য সমাপ্ত শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কর্তৃক পূজামণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিল্পী, পূজারি ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা এবং রাষ্ট্রীয় তদন্ত শুরু—সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য, ৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এবারের দুর্গাপূজায় সারাদেশে ৭৯৩টি পূজামণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে এবং অনুসন্ধান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেও তিনি জানান। একই সঙ্গে উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা চান।
এই বক্তব্যের পরপরই সংখ্যালঘু মহলে শঙ্কা ও অসন্তোষ দেখা দেয়। ঐক্য পরিষদ মনে করে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দেওয়া এমন মন্তব্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়াতে পারে এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে উসকে দিতে পারে।
বিবৃতিতে ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে প্রতিমা নির্মাণের ঐতিহ্যের মধ্যে অশুভ শক্তিকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা বহু পুরনো শিল্প ঐতিহ্যের অংশ। অসুরের মুখে দাড়ি বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ব্যবহার কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়কে বিদ্বেষের উদ্দেশ্যে করা হয় না। এটা কেবলই প্রতীকী রূপায়ণ।”
তারা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে আইনগত অনুসন্ধানের আওতায় আনা শিল্পী ও পূজারিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে এবং এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী।
বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়—
> “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিশেষ তকমা দিয়ে আইনকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও প্রগতিশীল সামাজিক শক্তিকে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।”
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সরকারের কাছে অনুরোধ জানায়, এমন সংবেদনশীল বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি, যাতে ভুল ব্যাখ্যা বা অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়।
বিবৃতির শেষে ঐক্য পরিষদ দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকল নাগরিককে সংযম ও সচেতনতার আহ্বান জানায়।