
শরীয়াহ আইন কায়েম হলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর বর্তাবে কিনা? শিশির মনিরের ব্যাখ্যা
HindusNews ডেস্ক :
জামায়াত ইসলামি যদি ক্ষমতায় আসে, তারা শরীয়াহ আইন কায়েম করবে কিনা,আর করলেও সেই আইন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপরও প্রয়োগ হবে কিনা— এই প্রশ্নে মুখ খুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জামায়াতের এমপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সম্প্রতি একটি টকশোতে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেন।
শিশির মনির বলেন, “ইসলামের আইনটা কি? ইসলামের আইনটা হলো যদি কারও সুনির্দিষ্টভাবে চুরি প্রমাণিত হয় তাহলে তার হাত কাটা যাবে। এখন প্রশ্ন হলো, অতীতে এই বিধানটাকে কিভাবে ইন্টারপ্রিট করা হয়েছে সেটা দেখা দরকার। ইসলামের যুগ ছিল, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ ছিল না? প্রায় আটশ বছর ধরে তো সেই আইনেই পৃথিবী চলেছে। কিন্তু দেখেন তো কয়জনের হাত কাটা হয়েছে? অনেক ক্ষেত্রেই বিচার প্রক্রিয়ায় সেটি স্থগিতও রাখা হয়েছে। অথচ এখন অনেকেই বিষয়টিকে সরলীকরণ করে বলেন, শরীয়াহ মানে হাত কাটা। এটা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা।”
তিনি বলেন, “শরীয়াহ আইনকে বুঝতে হলে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আইনি নজির জানতে হবে। শুধুমাত্র বাইনারি পদ্ধতিতে, অর্থাৎ ‘হবে’ বা ‘হবে না’— এভাবে আইনকে বোঝা যায় না। আইন সবসময় সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, কেউ পরিকল্পনা করে হত্যাকাণ্ড ঘটালে সেটা একরকম অপরাধ, আবার পারস্পরিক উত্তেজনায় হঠাৎ ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এই কারণেই ইসলামিক আইনকেও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতে হয়।”
ইসলামিক আইন পরিবর্তন করা হবে কিনা জানতে চাইলে শিশির মনির বলেন, “এই প্রশ্নটা আসলে বাইনারি প্রশ্ন নয়। সামাজিক ও আইনি বাস্তবতায় পরিবর্তন আসে, সেই অনুযায়ী আইনেও ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের পার্থক্য থাকতে পারে। বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে যেমন ইতোমধ্যে বহু দিক থেকে সংস্কার হয়েছে, ধর্মীয় বিধান প্রয়োগ হলেও ভয়ের কোনো কারণ নেই।”
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর শরীয়াহ আইন প্রয়োগ হবে কিনা— এই প্রশ্নে শিশির মনির পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “সকল ধর্মের মানুষের জন্যই পেনাল কোড বা দণ্ডবিধি সমানভাবে প্রযোজ্য থাকবে। এখানে বাড়তি কোনো কঠোরতা বা ব্যতিক্রমী শ্রেণি তৈরি করা হবে না। সবাই একই আইনের আওতায় থাকবে।”
তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, শরীয়াহ আইন নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে যে আশঙ্কা ও বিভ্রান্তি প্রচলিত, শিশির মনির তার বক্তব্যে সেটি নিরসনের চেষ্টা করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে জামায়াত ইসলামি তাদের নীতিগত অবস্থানকে কিছুটা নরম করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।