
স্ত্রীকে ইসলামী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুতি, মানসিক চাপে প্রাণ গেল স্বামীর!
ইসলামী ব্যাংক থেকে স্ত্রীকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় মানসিক চাপে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক হিন্দু স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম লিটন দাশ (৪৮)। তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার সুচক্রীদন্ডী এলাকার সুবিমল দাশের পুত্র।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন লিটন দাশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, লিটনের স্ত্রী অর্পন্না দত্ত ইসলামী ব্যাংক ঢাকা ধনিয়াপাড়া শাখায় সহকারী অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত রবিবার (৫ অক্টোবর) কোনো ধরনের নোটিশ বা কারণ ব্যাখ্যা ছাড়াই তাকে চাকরিচ্যুত (Termination) করা হয়।
চাকরি হারানোর বিষয়টি স্বামীর কাছে প্রথমে গোপন রাখেন অর্পন্না দত্ত। পরে ঢাকায় পৌঁছে তিনি লিটনকে ফোন করে জানান,
“আমার চাকরি চলে গেছে, তাই মালপত্র নিতে আসছি।”
স্ত্রীর মুখে এই কথা শুনেই লিটন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরিবার জানায়, চাকরিচ্যুতির খবর জানার পর থেকেই তিনি গভীর টেনশনে ছিলেন এবং পুরো দিন অস্থিরতায় কাটান।
পরবর্তীতে বুধবার সকালে হঠাৎ করেই লিটন দাশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তিনি স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের হবিগঞ্জ শাখার সহকারী অফিসার (চাকরিচ্যুত) আবু তৈয়ব সোহেল বলেন,
“স্ত্রীকে টার্মিনেশন দেওয়ার পর লিটন দাশ মানসিকভাবে চরম চাপের মধ্যে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান।”
স্থানীয়রা জানান, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অধীনে হিন্দু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যণীয়ভাবে টার্মিনেশনের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কেবল গত কয়েক মাসেই প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ ও মানবিকতা বিবর্জিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অভিযোগও উঠেছে।
মৃত লিটন দাশের পরিবার জানায়, “অর্পন্নার চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই ভাই আর আগের মতো ছিলেন না। ব্যাংকের অন্যায় সিদ্ধান্ত আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।”