ধর্ম অবমাননায় সমান শাস্তির দাবিতে জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের চার দফা ঘোষণা
ঢাকা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা ও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট। সংগঠনটি শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সব ধর্মের অবমাননার জন্য সমান আইন ও শাস্তির দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও বাস্তবে সংখ্যালঘুদের ওপর ধর্ম অবমাননার অজুহাতে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উচিত সব ধর্মের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন ও আইন প্রয়োগে বৈষম্য দূর করা। প্রদীপ কান্তি দে বলেন, “আমরা চাই, ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান—যে কোনো ধর্মের অবমাননা করলে তার জন্য যেন একই আইনে একই শাস্তি প্রযোজ্য হয়। ধর্মীয় অনুভূতির নামে কোনো গোষ্ঠী যেন অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেটি সরকারকে কঠোরভাবে দেখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, অতীতে কথিত ধর্ম অবমাননার অজুহাতে অসংখ্য সংখ্যালঘু গ্রামে হামলা হয়েছে, শত শত মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে, কিন্তু দোষীরা শাস্তি পায়নি। সেই সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে উদাহরণ স্থাপন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অনেক নিরপরাধ মানুষ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাই অতীতে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো পুনঃবিবেচনা করে অভিযুক্তদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় নিয়মিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। তাদের মতে, দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হলে ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে। প্রদীপ কান্তি দে বলেন, “আমরা সংঘাত নয়, সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। সকল ধর্মের মর্যাদা রক্ষায় একক আইনই হতে পারে ঐক্যের ভিত্তি।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ নাহা, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ হালদার, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পেশাজীবী সম্পাদক সুকুমার রায়, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সাবেক সভাপতি সজীব বৈদ্য, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজিব সাহা, হিন্দু যুব মহাজোটের সমন্বয়ক পঙ্কজ হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাধব দাস, এবং ঢাকা মহানগর হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি রমেন হালদারসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তাই রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দায়িত্ব হলো সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়া। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার এই দাবিগুলো বিবেচনা করে সব ধর্মের জন্য সমান আইন প্রণয়ন করবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ধর্মের নামে হিংসা, ঘৃণা বা নিপীড়নের পথ না বেছে নেয়।