
রাষ্ট্রীয় খরচে মন্দির নির্মাণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি :
দেশের সকল ধর্মাবলম্বীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় খরচে মন্দির নির্মাণের দাবি একেবারেই যৌক্তিক ও সংবিধানসম্মত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই দেশের সংবিধান সকল ধর্মের মানুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। রাষ্ট্রীয় অর্থে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মিত হয়েছে, যা মুসলমানদের উপাসনালয় উন্নয়নের অংশ। তাই হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নির্মাণের দাবি ন্যায়সঙ্গত ও সম্পূর্ণ যৌক্তিক।”
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “আমি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বাস করি—সব ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদে, শান্তিপূর্ণভাবে ও আনন্দের সঙ্গে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা কেউই কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ চাই না; বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানই এই জাতির মূল শক্তি।”
সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করা। দেশের সব ধর্মাবলম্বী একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ সত্যিকারের শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
সেফ এক্সিট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন বলেন, “আমরা দায়িত্ব হস্তান্তর করে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিতে চাই। আমাদের কারও বিদেশে সেকেন্ড হোম নেই, এমনকি নিজের বাড়িও নেই—আমি এখনো ভাড়া বাসায় থাকি। তাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য দেশের মানুষের সেবা করা।”
সম্প্রীতি ও সহাবস্থান জোরদারে আয়োজিত এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড. এস. এম. ফরহাদ হোসেন, জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। বক্তারা বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই জাতির অগ্রগতির অন্যতম চাবিকাঠি।
সমাবেশ শেষে ধর্ম উপদেষ্টা রাঙ্গামাটির মনোঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় কঠিন চীবর দান উৎসবে যোগ দেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা ও ভিক্ষুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হলেও বাস্তবে ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়নে বৈষম্যের অভিযোগ বহুদিন ধরেই রয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টার এই বক্তব্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ও সমান গুরুত্ব পাবে।