
সারাদেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খুন ও সহিংসতা
HindusNews ডেস্ক :
রাজধানীসহ সারাদেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে খুন, ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা। চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি মিলেমিশে আজ দেশকে এক অস্থির বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (HRSS)–এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন রাজনৈতিক সহিংসতা ও মব জাস্টিসের ঘটনায়।
শুধু রাজনৈতিক সংঘর্ষেই মারা গেছেন ১০৭ জন। গণপিটুনি ও মব সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১৩০ জন সাধারণ মানুষ। একই সময়ে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৬৩ জন নারী, আর ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে ১৯ জনকে। উদ্বেগজনকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলাও বেড়েছে; চলতি বছরেই দুইজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো দেশের আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো কার্যত ভেঙে পড়ে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পরিস্থিতির কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, প্রতিশোধমূলক হামলা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠপর্যায়ের মনোবল ভেঙে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক অদক্ষতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলছে। তারা মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দখলদারিত্বের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচারের বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে।
মানবাধিকারকর্মী এলিনা খান বলেন, “সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও মাঠপর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট। যত দ্রুত সম্ভব সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসতে হবে, নইলে আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।” তার মতে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে না আনলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
নাগরিক সমাজও এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিদিনই ঘটছে নতুন নতুন হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও গণপিটুনির ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ; আর প্রশাসন সেখানে অনেক সময় নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, আইনের শাসনই হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি।” নইলে গণঅভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তনের স্বপ্ন মানুষ দেখেছিল, তা ভেস্তে যাবে আবারও একই অস্থিরতা ও ভয়ের চক্রে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও মাঠপর্যায়ে তার কার্যকারিতা এখনও চোখে পড়ে না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এখন সময় এসেছে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার। কারণ, নিরাপত্তাহীনতার এই বাস্তবতায় দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই বাঁচার লড়াই লড়ছে।