

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছাত্রদল নেতা অপি দাশকে কুপিয়ে হত্যা! গ্রেফতার ১
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন ছাত্রদলের তরুণ নেতা অপি দাশ (২৫)। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন মো. তামিম নামের আরেক ছাত্রদলকর্মী, যিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের চৌধুরীহাট দাতারাম সড়কে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহত অপি দাশ ছিলেন চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বনিকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মিন্টু দাশের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে চৌধুরীহাট এলাকায় অবস্থান করছিলেন অপি দাশ ও তাঁর সহকর্মী তামিম। হঠাৎ করে একদল দুর্বৃত্ত তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপি দাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অপি দাশকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ছাত্রদলকর্মীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। খবর পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং রাতেই অভিযান চালিয়ে আফসার উদ্দিন (১৮) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার আফসার উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলার পানখালী এলাকার কবির আহমদের ছেলে। সে চৌধুরীহাটের চিকেন ইউনিকের পাশে সুজন কলোনিতে বসবাস করছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, হত্যাকাণ্ডে আরও কয়েকজন জড়িত ছিল, যাদের শনাক্তে অভিযান চলছে।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। আমরা ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছি এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অন্যদের শনাক্তের কাজ চলছে।”
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে কি না, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।”
অপি দাশের সহকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় সংগঠক, সদালাপী ও সবার প্রিয় মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে তরুণ নেতৃত্ব হারানোর বেদনায় শোকাহত ছাত্রদল পরিবার ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়।
চৌধুরীহাটে বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে।