দুর্গাপুরে স্ত্রীর পরিকল্পিত নির্যাতনে প্রধান শিক্ষক নিহত! এলাকায় শোকের ছায়া

6 week ago
VIEWS: 207

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার দাস (রাখাল) (৫৭)।

যিনি এলাকায় একজন সৎ, বিনয়ী ও জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্ত্রীর পরিকল্পিত নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে চন্দন কুমার দাস অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্ত্রী শেলী রানী দাস বিদ্যালয়ের এক সহকর্মী শিক্ষককে ফোন করে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলেন। খবর পেয়ে শিক্ষকরা ছুটে গেলেও শেলী রানী প্রথমে তাদের ঘরে প্রবেশে বাধা দেন এবং জানান, “স্যার অসুস্থ, ডাক্তার আনুন।” পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা জোর করে ঘরে ঢুকে দেখেন, প্রধান শিক্ষক অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন, শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে, হাতে ও গলায় ধারালো কিছু দিয়ে কাটার চিহ্ন, আর মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত লালা।

পরিস্থিতির অবনতি দেখে তাকে দ্রুত দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে তাকে ভর্তি করা হয় ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেসড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তিনি পাঁচ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

চন্দন কুমার দাস পৌরশহরের আমলাপাড়া এলাকার মৃত চন্দ্র শেখর দাসের বড় ছেলে। তিনি বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছিলেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রিয় মুখ ছিলেন।

সহকর্মী মোজাম্মেল মাস্টার বলেন,

“চন্দন স্যারকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাই, তখন দেখি তার গলায় এবং বাম হাতে কাটা দাগ থেকে রক্ত ঝরছে। মুখ দিয়ে গন্ধযুক্ত লালা বেরোচ্ছিলো। মনে হচ্ছে, তাকে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছিল, তারপর নির্যাতন করা হয়। এটা স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”

অন্য এক শিক্ষক জানান, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা ও জিনিসপত্র ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। সকালে খবর পেয়ে এলাকাবাসী পুরো ঘটনা জানতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চন্দন কুমার দাসের ছোট ভাই টুকন চন্দ্র দাসের মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ছয় মাস আগে। সন্তান না থাকায় তিনি ছোট ভাইয়ের মেয়ে টুম্পা দাসকে নিজের মেয়ের মতোই লালনপালন করতেন। এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী শেলী রানী দাস ঈর্ষান্বিত ছিলেন এবং প্রায়ই পারিবারিক কলহ সৃষ্টি করতেন।

চন্দন কুমার দাসের মৃত্যুতে দুর্গাপুর পৌরসভা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও মুক্তিযোদ্ধারা ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন।

দুর্গাপুর উপজেলা শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন,

“এটি নিছক পারিবারিক ঘটনা নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।”

এদিকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানা পুলিশ নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। প্রাথমিকভাবে এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (U.D. Case) হিসেবে নথিভুক্ত হলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় প্রমাণ মিললে এটি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তর করা হবে।

চন্দন কুমার দাসের মৃত্যুতে বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা বলেন —

“চন্দন স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন একজন দিকনির্দেশক ও অভিভাবকসুলভ মানুষ। তার মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন