
দেবী কালিকার ১১টি রূপ, জানুন কোন রূপের কী মাহাত্ম্য
HindusNews ডেস্ক :
কালিকাপুরাণ, মহাকাল সংহিতা ও বিভিন্ন তন্ত্রগ্রন্থে দেবী কালিকার অসংখ্য রূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। আদ্যাশক্তি রূপে তিনি ব্রহ্ম স্থির ও নিষ্ক্রিয়। কিন্তু সেই ব্রহ্ম যখন কর্মশক্তি লাভ করেন, তখনই দেবী কালী রূপে প্রতিভাত হন। এই কারণেই দেবী কালিকা সৃষ্টির, সংহার ও রক্ষার প্রতীক। তন্ত্র মতে দেবীর নয় থেকে শুরু করে আট কিংবা এগারোটি প্রধান রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১১টি রূপই সর্বাধিক পূজিত ও প্রচলিত।
নিচে দেবী কালিকার এই ১১টি রূপের মাহাত্ম্য তুলে ধরা হলো —
🔹 ১. দক্ষিণাকালী
গ্রামবাংলার গৃহস্থ ও মন্দিরে সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ এটি। দেবীর গাত্রবর্ণ নীল, গলায় মুণ্ডমালা, হাতে খড়্গ ও নরমুণ্ড। ডান হাতে অভয় ও বরমুদ্রা প্রদর্শিত। দক্ষিণাকালীর পদতলে শায়িত অবস্থায় থাকেন মহাদেব। এই রূপ শক্তি ও করুণার মেলবন্ধন।
🔹 ২. শ্মশানকালী
তন্ত্রসাধক ও প্রাচীন ডাকাত সম্প্রদায়ের মধ্যে পূজিত হতেন এই দেবী। শ্মশানে এই কালীর আরাধনা করা হয়। প্রধান আচারে থাকে মন্ত্র, তন্ত্র ও বলিদান। দেবী এখানে মৃত্যুর মধ্যেও জীবনের শক্তির প্রতীক।
🔹 ৩. সিদ্ধকালী
সাধকরা সিদ্ধি বা অলৌকিক শক্তি লাভের জন্য অমাবস্যার রাতে সিদ্ধকালীর পূজা করেন। বিশ্বাস, তাঁর কৃপায় জ্ঞান, যোগশক্তি ও মুক্তিলাভ সম্ভব।
🔹 ৪. ফলহারিণী কালী
গৃহস্থ পরিবারে বছরে একবার পূজিত হন ফলহারিণী কালী। সংসারে শান্তি, সমৃদ্ধি ও অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের জন্য এই রূপে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়।
🔹 ৫. মহাকালী
ভূতচতুর্দশীর রাতে মহাকালীর পূজা হয়। দেবীর দশ মাথা, দশ হাত ও দশ পা — প্রতিটি হাতে অস্ত্র। এই রূপ সংহার ও সময়ের প্রতীক। এখানে শিব থাকেন অনুপস্থিত, কারণ ইনি সময়ের অপরাজেয় শক্তি।
🔹 ৬. কাম্যাকালী
অষ্টমী, চতুর্দশী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে এই কালীর পূজা প্রচলিত। কামাক্ষ্যা অঞ্চলে ইনি বিশেষভাবে পূজিত হন। পূজা-পদ্ধতি দক্ষিণাকালীর সঙ্গে অনেকাংশে মিল।
🔹 ৭. গুহ্যকালী
অত্যন্ত গোপনীয় ও তন্ত্রসাধনায় পূজিত এই দেবী কৃষ্ণবর্ণা। গলায় থাকে ৫০টি নরমুণ্ডের মালা। গুহ্যকালীর রূপ ভয়ংকর, তবে তিনি তন্ত্রের সর্বোচ্চ শক্তির প্রতীক।
🔹 ৮. ভদ্রকালী
মন্দিরে সাধারণত ভদ্রকালীর পূজা হয়। ইনি মঙ্গল ও রক্ষার প্রতীক। সমাজে শান্তি ও কল্যাণ কামনায় পূজিত হন।
🔹 ৯. চামুণ্ডা কালী
চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে বধ করে দেবী চামুণ্ডা কালী রূপ ধারণ করেন। ইনি দুর্গার ভীষণ রূপ, যিনি অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে ধর্ম ও দেবতাদের রক্ষা করেন।
🔹 ১০. শ্রীকালী
দারুক অসুরবধে দেবী এই রূপে প্রকাশ পান। শ্রীকালীর আরাধনা শক্তির সঙ্গে ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
🔹 ১১. রক্ষাকালী
দক্ষিণাকালীরই আরেক রূপ রক্ষাকালী। নামের মধ্যেই নিহিত আছে তাঁর কর্ম — রক্ষা। ইনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রক্ষাকর্ত্রী, অশুভ শক্তি থেকে ভক্তদের সুরক্ষা দেন।
দেবী কালিকা শুধুই সংহারের প্রতীক নন; তিনি সৃষ্টির, রক্ষার ও জ্ঞানের উৎস। তাঁর বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায় জীবনচক্রের নানা দিক — ভয় ও ভক্তি, শক্তি ও করুণা, মৃত্যু ও মুক্তি।
ভক্তরা বিশ্বাস করেন, মাতৃরূপী এই দেবীই সমস্ত শক্তির মূল।