জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’ হরণের অভিযোগ, শ্যামা পূজার অনুমতি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হিন্দু শিক্ষার্থীরা

6 week ago
VIEWS: 127

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্যামা পূজা আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তুলেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় বৈষম্য’ ও ‘হস্তক্ষেপ’-এর প্রতিবাদ জানায়। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এবারের শ্যামা পূজা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজনের জন্য প্রক্টরের দপ্তরে আবেদন করলে প্রথমে মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন আনুষ্ঠানিক অনুমতি চাইলে প্রশাসন নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কথোপকথনের সময় প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক কালীপূজাকে “উত্তর ভারতের পূজা” বলে মন্তব্য করেন, যা উপস্থিতদের ক্ষুব্ধ করে। পরে উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে দেখা করলে তিনি নাকি বলেন, “ক্যাম্পাসে নতুন কোনো পূজার ট্রাডিশন শুরু করতে দেওয়া যাবে না।”

এই বক্তব্যের পর থেকেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপেক্ষা করছে এবং কেন্দ্রীয় মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি বছরের পর বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি সুমন কুমার দাস বলেন, “আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে গেছি, কিন্তু তারা প্রতিবারই মুলা দেখিয়েছে। প্রশাসন যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে, তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত, কারণ নিরাপত্তা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব।”

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, “এই বাংলার অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য কোনো প্রশাসনের অনুগ্রহ নয়, এটি শত বছরের সংস্কৃতি। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান—সবাই এই বাংলার সমান অংশীদার। আমরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, জগন্নাথে মন্দির হবেই, শ্যামা পূজাও হবেই।”

এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারাও সংহতি প্রকাশ করেন। ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোন ধর্ম পালন করবে, তা প্রশাসন ঠিক করে দিতে পারে না। যারা আজ ধর্মের নামে বৈষম্য সৃষ্টি করছে, তারা আসলে মৌলবাদেরই ধারক।” সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, “প্রত্যেকের নিজ ধর্ম পালনের অধিকার আছে। প্রশাসনের মন্তব্য আমরা নিন্দা করছি এবং মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবিতে সনাতন শিক্ষার্থীদের পাশে আছি।”

বিক্ষোভে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদি হাসান হিমেল বলেন, “একটি ফ্যাসিবাদের পতনের পর আরেকটি ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। প্রশাসন যদি মৌলবাদ কায়েমের চেষ্টা করে, আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব। আগামী এক মাসের মধ্যেই এই ক্যাম্পাসে মন্দির প্রতিষ্ঠা দেখতে চাই।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কালী পূজাকে উত্তর ভারতে ধুমধাম করে পালনের প্রসঙ্গেই কথা হয়েছিল, সেটি ভুলভাবে বোঝা হয়েছে। আমরা মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছিলাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও চাকসু নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এই বছরটা স্কিপ করতে বলেছিলাম।”

তবে উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শ্যামা পূজার অনুমতি না দেওয়া এবং প্রশাসনের বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেন, দ্রুত অনুমতি না দিলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রাষ্ট্র ও প্রশাসনের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— সেই মৌলিক অধিকারই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন