
দিনাজপুরে ‘শ্রী শ্রী ডাকলক্ষ্মী পুজো’র মধ্য দিয়ে ধানকাটার সূচনা
দেবব্রত | দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুর জেলায় শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘শ্রী শ্রী ডাকলক্ষ্মী পুজো’, আর এই পুজো দিয়েই কৃষক সমাজ শুরু করেছে ধানকাটা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। শতাব্দীপ্রাচীন এই ধর্মীয় ও কৃষি-সংস্কৃতির মেলবন্ধন আজও জীবন্ত হয়ে আছে দিনাজপুরের গ্রামীণ জনজীবনে।
স্থানীয় কৃষকদের বিশ্বাস, লক্ষ্মী দেবীর আশীর্বাদ ছাড়া ধানকাটা শুরু করলে অশুভ শক্তির প্রভাব পড়ে, ফলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহে তারা মণ্ডপে লক্ষ্মী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে ‘ডাকলক্ষ্মী পুজো’ উদযাপন করেন। পুজো শেষে ঢাকের বাদ্য আর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে কৃষকেরা প্রথম কাস্তে চালান মাঠে।
কৃষকদের মুখে ঐতিহ্যের গল্প
দিনাজপুর সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক গোপাল চন্দ্র রায় বলেন,
“আমাদের দাদুর সময় থেকেই এই পুজো চলছে। মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদে ধান ভালো হয়, পোকামাকড় লাগে না, আর ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।”
আরেক কৃষক বিমল বর্মণ জানান,
“ধানকাটা শুরু মানেই আনন্দের সময়। পুজো না করলে কেউ ধান কাটে না। দেবীর পূজা দিয়েই কাস্তে হাতে নিই।”
ফসলের আশাবাদ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমান ও আউশ ধানের ফলন স্বাভাবিকের চেয়েও ভালো। আগাম ধানকাটা শুরু হওয়ায় বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে, যা কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও রোগবালাইহীন মৌসুমের কারণে ধানের ফলন নিয়ে আশাবাদী তারা।
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা
‘ডাকলক্ষ্মী পুজো’ শুধু ধর্মীয় আচার নয়— এটি একটি সামাজিক উৎসব। পুজোর দিন গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই অংশ নেন। কেউ ভোগ রান্না করেন, কেউ শঙ্খ বাজান, কেউ আবার মাঠে গিয়ে প্রথম ধান কেটে বাড়ি আনেন। এই ধান দিয়েই ঘরে তৈরি হয় নতুন অন্নের ‘নবান্ন ভাত’।
স্থানীয় সমাজবিদ রাজীব রঞ্জন রায় বলেন,
“এই পুজো আসলে কৃষির সঙ্গে ধর্মের যোগ। এটি একদিকে মায়ের পূজা, অন্যদিকে কৃষকের জীবনের উৎসব। এই ঐতিহ্যই আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিকে জীবিত রেখেছে।”
দিনাজপুরের কৃষকেরা বিশ্বাস করেন— ডাকলক্ষ্মী পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ধানকাটা শুধু ফসলের নয়, জীবনের সমৃদ্ধির সূচনা।
প্রতি বছর এই সময়টাতে মাঠে মাঠে ঢাক, শঙ্খ, হাসির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জনপদ।