
গোপালগঞ্জে বিষপানে গৃহবধূর মৃত্যু : পরিবারের অভিযোগ হত্যা!
নিজস্ব প্রতিবেদক :
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। পারিবারিক কলহের জেরে বিষপানে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেলেও নিহতের পরিবার দাবি করছে, এটি কোনো আত্মহত্যা নয়,পরিকল্পিত হত্যা।
নিহত তরুণীর নাম সম্পা বাকচী (২৩)। তার স্বামী সজল জয়ধর, বাড়ি একই গ্রামের তালপুকুরিয়া। ঘটনার সময় সম্পা বাড়িতেই ছিলেন। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, গত ১৮ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১৯ অক্টোবর রাত ১২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে তিনি ঘরে রাখা ঘাস মারার কীটনাশক পান করেন। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত তাকে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক সম্পাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু কোটালীপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার পথে সম্পা বাকচী মৃত্যুবরণ করেন।
মৃতদেহ বাড়িতে নেওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয় নানা আলোচনা। কেউ কেউ আত্মহত্যা বললেও নিহতের পরিবার দৃঢ়ভাবে বলছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। পরবর্তীতে খবর পেয়ে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য মরদেহটি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের কাকাতো ভাই জীবন বাগচী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্টে অভিযোগ করেন, “আমার জ্যাঠাতো বোন সম্পা বাকচীকে চার বছর আগে বিয়ে দিয়েছিলাম কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামে। তার স্বামী, শ্বশুর এবং ভাসুর দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে তাকে নির্যাতন করত। আমাদের ধারণা, তারা খাবারে বিষ মিশিয়ে সম্পাকে হত্যা করেছে। এরপর মরদেহটি আমাদের না জানিয়ে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে। শনিবার রাতে আমরা কোটালীপাড়া থানার সহযোগিতায় সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করি। এখন আমার বোনের দুই বছরের কন্যা সন্তানটি অনাথ হয়ে গেল। ঈশ্বরই বিচার করবেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্পা বাকচী প্রায়ই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হতেন। একাধিকবার বাপের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইলেও সামাজিক ও পারিবারিক চাপে তা সম্ভব হয়নি। তার হঠাৎ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, মেয়েটি শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের ছিল, তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না।
কোটালীপাড়া থানার এক কর্মকর্তা HindusNews-কে জানান, “আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি জানা গেছে। তবে এটি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড—তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।”
এদিকে, জীবন বাগচীর ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত দাবি করেছেন। অনেকেই বলছেন, এমন ঘটনার সঠিক তদন্ত না হলে আরও নিরীহ নারী হয়তো একই পরিণতির শিকার হবেন।