
হিন্দু ও শিখদের দেশে ফেরার আহ্বান তালেবান সরকারের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যদের দেশে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যারা ফিরে আসবেন তাদের পুরনো সম্পত্তি ও ব্যবসা ফিরিয়ে দিতে সরকার সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
একসময় আফগানিস্তান ছিল বহু ধর্মাবলম্বীর সহাবস্থানের দেশ। কাবুল, কান্দাহার, হেরাত—এসব শহরে হাজার হাজার হিন্দু ও শিখ পরিবারের বসবাস ছিল। কিন্তু গৃহযুদ্ধ, তালেবান শাসন, এবং পরবর্তী বিদেশি হস্তক্ষেপে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা একে একে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশক থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক তালেবান পুনরুত্থানের সময়, প্রায় সব হিন্দু ও শিখ পরিবার দেশ ছেড়ে ভারতে, ইউরোপে কিংবা উত্তর আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটেই দিল্লি সফরের সময় আফগান হিন্দু ও শিখ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে এমন আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি। তিনি বলেন,
“যে হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বীরা গত কয়েক দশকে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন, আমরা তাদের দেশে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আফগানিস্তান সরকার তাদের পুরনো সম্পত্তি ও ব্যবসা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।”
দিল্লির আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ১৩ জন প্রবাসী আফগান হিন্দু ও শিখ প্রতিনিধি। তারা তালেবান সরকারের আশ্বাস শুনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আফগানিস্তানে এখনও নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি।
এরই মধ্যে আমির খান মুত্তাকির সফরকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যেখানে দাবি করা হয় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন—আফগানিস্তানে ‘শিব ও বিষ্ণু মন্দির’ তৈরি করবেন। এমনকি তাকে মোদির প্রশংসা করতে দেখা যায় ভিডিওটিতে। কিন্তু পরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ফ্যাক্টচেকার সংস্থাগুলো জানায়, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি ভুয়া ভিডিও।
বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান সরকারের এই নতুন বার্তা মূলত আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের ধর্মীয় সহনশীল ও কূটনৈতিক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করা এবং বিশ্বের কাছে মানবিক চেহারা উপস্থাপনের উদ্দেশ্যেই তারা হিন্দু ও শিখদের দেশে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—তালেবানের আমলে যে দেশে মন্দির ভাঙা, নির্যাতন ও নির্বাসনের ইতিহাস এত গভীর, সেখানে সত্যিই কি নিরাপদে ফিরে যেতে পারবেন সেই হিন্দু ও শিখরা, যারা একসময় নিজেদের শিকড় হারাতে বাধ্য হয়েছিলেন?
সময়ই দেবে তার উত্তর, তবে এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও ধর্মীয় সংলাপের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।