
রাউজানে চাঁদা না পেয়ে সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীর দোকানে আগুন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় এক সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকানে দুর্বৃত্তদের আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এক মাস ধরে চলা চাঁদাবাজির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েই দোকানটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর নাম নিদর্শন বড়ুয়া (৬৫)। তিনি রাউজান উপজেলার পূর্বগুজরা ইউনিয়নের পশ্চিম আঁধারমানিক এলাকার বাসিন্দা এবং মৃত উল্লাস বড়ুয়ার পুত্র। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে নিজ দোকানের ভস্মীভূত ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন—
“বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ভাইপো ফোন করে জানায়, দোকানে আগুন লেগেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি সব শেষ—চাল, ডাল, তেল, আটা-ময়দা, এমনকি দোকানের কাঠের তাক আর ফ্রিজও পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি।”
নিদর্শন বড়ুয়া জানান, গত ১৫ বছর ধরে তিনি এলাকায় ছোট একটি মুদি দোকান চালিয়ে আসছেন। এতদিন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু গত এক মাস আগে থেকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসে এবং তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে তারা দাবি কমিয়ে ৮০ হাজার, ৫০ হাজার, এমনকি ২০ হাজার টাকাতেও নামিয়ে আনে। কিন্তু তিনি কোনো টাকা দিতে অস্বীকার করলে শুরু হয় হুমকি।
তিনি আরও বলেন,
“৫ অক্টোবর রাতে তিনজন হেলমেট পরা যুবক মোটরসাইকেলে এসে দোকানের সামনে দাঁড়ায়। দুটি গুলি ছোঁড়ে—একটি কাচ ভেঙে দোকানের ভেতর ঢোকে, আরেকটি বাইরে পড়ে। যাওয়ার সময় বলে, টাকা না দিলে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিব, মেরেও ফেলব।”
এই ঘটনার পর তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তার দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা আগুন দেখে ছুটে এসে পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করলেও সব কিছু মুহূর্তে ছাই হয়ে যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা স্থানীয় ইউপি সদস্য উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন,
“নিদর্শন দাদার দোকানটা গত রাতে পুড়ে গেছে। কিভাবে আগুন লেগেছে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না, তবে শুনেছি মাসখানেক আগে কে বা কারা তাকে চাঁদা দিতে বলেছিল। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক, যেন নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয়।”
এই বিষয়ে পূর্বগুজরা তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক দীপ্ত দাশ রায় বলেন,
“আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখনো পর্যন্ত আগুন লাগার সঙ্গে চাঁদাবাজির সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আগের অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাউজানের পূর্বগুজরা ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি এবং হুমকির ঘটনাও ঘটেছে। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নিদর্শন বড়ুয়া শেষ কথায় বলেন,
“আমি কাউকে দোষ দিতে পারছি না। আমি শুধু চাই শান্তিতে থাকতে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যেন সবাই নিরাপদে ব্যবসা করতে পারে।”
স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।