
এবার হিন্দুরা দেখাবে, হিন্দু মানে নৌকা নয়, হিন্দু মানে দাঁড়িপাল্লা: গোলাম পরওয়ার
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায় আর আওয়ামী লীগের “ভোটব্যাংক” হয়ে থাকবে না। বরং তারা এবার পরিবর্তনের পথে হাঁটবে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “হিন্দুরা এবার দেখাবে— হিন্দু মানে নৌকা নয়, হিন্দু মানে দাঁড়িপাল্লা।”
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উপশহরে আয়োজিত ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “হিন্দুদের নিয়ে সবাই বলে, হিন্দু মানে আওয়ামী লীগ, হিন্দু মানে নৌকা। আমি বলি না। এবার হিন্দুরা দেখাবে, হিন্দু মানে নৌকা নয়, হিন্দু মানে দাঁড়িপাল্লা।”
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীতে বিশ্বাস রাখলে হিন্দু সম্প্রদায় অতীতের যেকোনো সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপদ থাকবে। তিনি তালা-কলারোয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ভয় পাবেন না। জামায়াতে ইসলামী এখন জনগণের দল, নিরাপত্তার দল। আমরা কারও ক্ষতি করি না, বরং যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায় করে, তাদের বিরুদ্ধেই আমরা কথা বলি।”
গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, জামায়াতে ইসলামী কখনও ধর্মভিত্তিক বৈষম্য করে না। তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতি ন্যায়, নিরাপত্তা ও মানবতার রাজনীতি। আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান— সবার জন্য কাজ করি। আমরা কারও ধর্ম দেখি না, দেখি চরিত্র ও আদর্শ।”
সমাবেশে নাম উল্লেখ না করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ইঙ্গিত করে গোলাম পরওয়ার বলেন, “তোমরা নতুন ছাত্রদের দল। জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিও না। জামায়াতে ইসলামী একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, যার শিকড় মাঠে, মানুষের হৃদয়ে।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন গঠিত একটি ছাত্র সংগঠনের নেতা দুঃখজনকভাবে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী সংস্কার চায় না। অথচ ঐকমত্য কমিশনে আমরা প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। তারা চায় আমরা তাদের সমালোচনা করি, কিন্তু আমরা তো তাদের নামই নিচ্ছি না। আমরা কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে চাই, জামায়াত পরিবর্তনের পথে আছে।”
তালা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মফিদুল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, জেলা জামায়াতের আমির শহীদুল ইসলাম মুকুল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক সুজায়েত আলী, সাতক্ষীরা শহর শিবিরের সভাপতি আল মামুন এবং জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি জুবায়ের হোসেন।
সমাবেশস্থলে কয়েক হাজার কর্মী, সমর্থক ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা আগামী নির্বাচনে ঐক্য, সহাবস্থান ও পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে সংখ্যালঘু ভোটারদের উদ্দেশে এমন বার্তা দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু ভোট আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকে থাকলেও, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে নতুন এক সমীকরণের আভাস মিলছে। তবে এই বক্তব্য ভোটের মাঠে বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।