
ফেসবুকে মা কালীকে নিয়ে কটূক্তি — প্রতিবাদ করায় আটক হিন্দু যুবক পূর্বায়ন মণ্ডল, প্রকৃত অভিযুক্ত এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সনাতন ধর্মীয় প্রতীক ও দেবদেবীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য নতুন নয়। কিন্তু এবার ঘটনাটি আরও বেদনাদায়ক মোড় নিয়েছে— কটূক্তিকারী মুক্ত থাকলেও প্রতিবাদকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি কালীপূজা উপলক্ষে ফেসবুকে একটি ধর্মীয় পোস্ট ঘিরে।
একজন সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারী কালীমায়ের একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে ভক্তিপূর্ণ মন্তব্যে একজন হিন্দু ভক্ত “জয় মা কালী” লিখে শুভেচ্ছা জানান। ঠিক সেই পোস্টের নিচেই এক মুসলিম যুবক আবদুর রহমান অকথ্য ও অশালীন ভাষায় মা কালীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে লেখেন —
“কালী কালীর শাওয়ায় মার তালি”
এই মন্তব্যটি মুহূর্তেই ক্ষোভ সৃষ্টি করে। স্থানীয় ও অনলাইন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই এটিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাত বলে মন্তব্য করেন।
প্রতিবাদে জবাব দেন হিন্দু যুবক পূর্বায়ন মণ্ডল
এই কটূক্তির প্রতিবাদে পূর্বায়ন মণ্ডল নামের এক হিন্দু তরুণ নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে কমেন্টে লেখেন —
“লুচ্ছা মাগিখোর মোহাম্মদের গাঁড়ে লাথি”
যদিও তার বক্তব্যটি সরাসরি আবদুর রহমানের কটূক্তির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেওয়া হয়, কিন্তু এরপরই পুরো ঘটনার দায় এসে পড়ে পূর্বায়নের উপর। স্থানীয় প্রশাসন কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
অন্যদিকে, মা কালীকে নিয়ে যে অশ্লীল মন্তব্যটি করেছিলেন আবদুর রহমান, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি জানাজানি হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। অসংখ্য হিন্দু তরুণ-তরুণী, সনাতন ধর্মাবলম্বী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“হিন্দু দেবদেবীদের গালাগালি করলে কিছুই হয় না, কিন্তু হিন্দু প্রতিবাদ করলেই সাথে সাথে জেলে পাঠানো হয়।”
নেটিজেনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—
“ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা মানে কি শুধু এক ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য?”
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন—
“যখন হিন্দু ধর্ম, দেবতা, বা পূজা নিয়ে কটূক্তি হয়, তখন প্রশাসন চুপ থাকে। কিন্তু প্রতিবাদ করলেই ধরা হয় প্রতিবাদকারীকে। এটা কেমন বিচার?”
স্থানীয়দের বক্তব্য
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বায়ন মণ্ডল একজন সাধারণ কলেজপড়ুয়া তরুণ, যিনি নিয়মিত ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন,
“পূর্বায়ন অপরাধ করেনি, বরং সে মা কালীকে গালাগাল করা লোকটির প্রতিবাদ করেছে। অথচ তাকেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।”
এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, এমন অবিচার চলতে থাকলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিপন্ন হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বায়ন মণ্ডলকে আটক করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।
তবে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্ন সত্ত্বেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত মা কালীকে নিয়ে কটূক্তিকারী আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।
সনাতন সমাজের প্রতিবাদ ও দাবি
ঘটনার পর বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পূর্বায়ন মণ্ডলের মুক্তি দাবি জানানো হয়েছে।
তাদের বক্তব্য—
“দেশের সংবিধান সব ধর্মের সমান মর্যাদা দেয়। তাহলে এক ধর্মের অবমাননা করলে নীরবতা আর অন্য ধর্মের প্রতিবাদ করলে গ্রেপ্তার— এ কেমন বিচার?”
তারা আরও বলেন,
“মা কালী ও সনাতন ধর্মের প্রতি এমন অবমাননা সহ্য করা যায় না। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে, অন্যথায় সনাতন সমাজের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে।”
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনায় দ্বৈত মানদণ্ডের আইন প্রয়োগ প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।
আইনের চোখে সবাই সমান — এই নীতির বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে ধর্মীয় বিভাজন আরও গভীর হতে পারে।
সনাতন সমাজের তিন দফা দাবি:
মা কালীকে নিয়ে কটূক্তিকারী আবদুর রহমানকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
প্রতিবাদকারী হিন্দু যুবক পূর্বায়ন মণ্ডলকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
ভবিষ্যতে ধর্মীয় অবমাননা বন্ধে সমান আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা:
ধর্মীয় অবমাননা কারও কাছ থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনের উচিত এই ধরনের ঘটনায় নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করা, যাতে কেউ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের নামে অন্যায় আচরণের শিকার না হয়।