
গাছ ব্যবসায়ীর ট্রলির ভারে ভেঙে পড়ল ব্রীজ, দুর্ভোগে এক হাজার হিন্দু পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক :আগৈলঝাড়া (বরিশাল)
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের উত্তর বারপাইকা (হাওলা) গ্রামে গাছ বোঝাই ট্রলির ভারে একটি আয়রন ব্রীজ ভেঙে যাওয়ায় অন্তত এক হাজার হিন্দু পরিবারের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে গ্রামবাসী এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা ব্রীজ পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ব্রীজটি নির্মিত হয়। এই ব্রীজ ছিল উত্তর বারপাইকা গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। পাশের গ্রাম নগরবাড়ি ও আশপাশের এলাকার মানুষও নিয়মিত এই পথ দিয়ে চলাচল করতেন।
গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে নগরবাড়ি গ্রামের গাছ ব্যবসায়ী লোকমান খান একটি বড় গাছ বোঝাই ট্রলি নিয়ে ব্রীজ পার হওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা ব্রীজের দুর্বলতা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে বাধা দিলেও তিনি জোরপূর্বক গাছসহ ট্রলিটি পারাপার করেন। ফলে ব্রীজের মাঝখানের ঢালাই ভেঙে নিচে নেমে যায় এবং ব্রীজটি পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
ভাঙার পর থেকে ব্রীজের উপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। পথচারীরা, বিশেষত স্কুলগামী শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা, এখন ভাঙা অংশের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। বিকল্প রাস্তা না থাকায় গ্রামের মানুষজন পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা লিখিল হালদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা বারবার নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু লোকমান খান জোর করে গাছ বোঝাই ট্রলি নিয়ে ব্রীজের ওপর উঠান। এরপরই ব্রীজ ভেঙে পড়ে। এখন আমাদের প্রতিদিন চলাচলে মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে।”
অভিযুক্ত ব্যবসায়ী লোকমান খান অবশ্য দায় এড়িয়ে বলেন,
“আমি তখন উপস্থিত ছিলাম না, আমার শ্রমিকরা ট্রলিটি নিয়ে যায়। তবে আমি সোমবারের মধ্যে ভাঙা অংশে চলাচলের অস্থায়ী ব্যবস্থা করব।”
এদিকে, উপজেলা প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন,
“ব্রীজ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি জানা আছে। আমি নিজে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করব। প্রয়োজনে নতুন করে ব্রীজ নির্মাণ বা জরুরি মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রীজটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো এলাকাই এখন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কৃষিপণ্য, শিক্ষার্থী ও দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহনে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত স্থায়ীভাবে ব্রীজ পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ততদিন পর্যন্ত, এক হাজারেরও বেশি হিন্দু পরিবারকে ভাঙা ব্রীজের দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে।