জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজে ৪০ বছরের ঐতিহ্য ভঙ্গ, অধ্যক্ষের আপত্তিতে ছট পূজা অনিশ্চিত

4 week ago
VIEWS: 207

জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজের পুকুরে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নিষ্ঠা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ছট পূজা পালন করে আসছেন। এই পূজা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং জয়পুরহাট শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু চলতি বছর কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ পূজার আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ায় এই চার দশকের ধারাবাহিকতা হঠাৎ করেই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

স্থানীয় ভক্ত ও আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কলেজের পুকুরটি ছট পূজার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি বছর সূর্যদেব ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে এখানে আরাধনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কলেজের ছাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় নাগরিকরাও অংশ নেন। গত ৪০ বছরে কোনো অধ্যক্ষ বা প্রশাসনই পূজায় বাধা দেননি। এমনকি কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও পূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ গত কয়েক বছর ধরে পূজাটি কলেজের বাইরে করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা। তার যুক্তি, কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের পাশেই পুকুরটি হওয়ায় পূজার সময় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এছাড়া ছট পূজার সময় ঢাক, শঙ্খ ও আরতির ঘণ্টা বাজানো কলেজের ‘শান্ত পরিবেশে’ বিঘ্ন ঘটায় বলেও তিনি দাবি করেছেন।

ভক্তদের মতে, এই যুক্তি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক। কারণ গত চার দশকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা কখনোই দেখা দেয়নি। বরং প্রতি বছর ভক্তরাই অনুষ্ঠান শেষে কলেজের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। স্থানীয় হিন্দু সমাজের প্রবীণ সদস্য সুনীল চন্দ্র সাহা বলেন, “এই পুকুরে আমরা সূর্যদেব ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করি। এটা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ৪০ বছর ধরে কেউ আপত্তি করেননি—এখন কেন?”

ধর্মীয় ঐতিহ্যকে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, অধ্যক্ষের এই অবস্থান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। তাদের দাবি, ৪০ বছরের ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির প্রতীক এই পূজাকে বন্ধ না করে পূর্বের মতোই কলেজের পুকুরে পালনের অনুমতি দেওয়া হোক।

জয়পুরহাটের সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় নেতারাও বিষয়টিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। তারা মনে করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সব ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও বাস্তবে এরকম সিদ্ধান্ত ঐক্য ও সম্প্রীতির পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এই ঘটনার পর জয়পুরহাটে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যাতে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয় এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেন তাদের দীর্ঘদিনের এই ঐতিহ্য আগের মতোই পালন করতে পারেন।

“ঐতিহ্যকে থামানো যায় না,” — বলেন এক ভক্ত। “এটি আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। পূজাটি এখানেই হয়েছে, এখানেই হওয়া উচিত।”

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন