+1

মুফতি মুহিব্বুল্লাহকে কি ইসকন সত্যিই অপহরন করেছিলো? তদন্তে ফেঁসে যাচ্ছেন তিনি!

4 week ago
VIEWS: 278

নিজস্ব প্রতিবেদক :

গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী (৬০) সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছেন এক রহস্যজনক ঘটনার কারণে। তিনি দাবি করেছেন, ২২ অক্টোবর সকালে অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যায় এবং ২৪ ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশি তদন্তে দেখা যাচ্ছে, তার এই বর্ণনার সঙ্গে ঘটনাস্থলের প্রমাণ ও ভিডিওফুটেজের কোনো মিল নেই। ফলে সমাজে তৈরি হয়েছে তীব্র কৌতূহল— ঘটনাটি আসলেই অপহরণ, না কি কোনো সাজানো নাটক?

মুফতি মুহিব্বুল্লাহ জানান, সেদিন সকাল সাতটার দিকে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে শিলমুন এলাকার একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে যাচ্ছিলেন। সেই সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে তার পাশে থামে। গাড়ি থেকে নেমে আসে চার থেকে পাঁচজন ব্যক্তি, যারা তাকে চোখ বেঁধে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নেয়। তার দাবি, কয়েকদিন ধরে তিনি বেনামী চিঠি ও হুমকি পাচ্ছিলেন— যেখানে লেখা ছিল, “অখণ্ড ভারত তথা ISKCON-এর পক্ষে কথা বল, না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে।” অপহরণকারীরা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে, এবং উত্তরবঙ্গের দিকে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা তাকে পঞ্চগড়ের একটি নির্জন স্থানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

পরদিন সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা পঞ্চগড় শহরের হেলিপ্যাড এলাকার পাশে তাকে দেখতে পান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি তখন হাতে শিকল বাঁধা অবস্থায় রাস্তার ধারে এক গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকেরা জানান, তার শরীরে ক্লান্তির ছাপ ছিল, তবে মারধর বা আঘাতের কোনো গুরুতর দাগ পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পরপরই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত শুরু করে। টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জানান, আশপাশের ছয়টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মুফতি মুহিব্বুল্লাহ নিজেই রাস্তা পার হচ্ছেন, কিন্তু কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সন্দেহজনক ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়নি। পুলিশ বলেছে, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তার বর্ণনার সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো মিল নেই। ফোন কল ট্র্যাকিং ও আশেপাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দিও একই ইঙ্গিত দিচ্ছে— ঘটনাটি অপহরণের মতো মনে হচ্ছে না।

অন্যদিকে, মুফতি মুহিব্বুল্লাহর অভিযোগে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON)-এর নাম আসায় ধর্মীয় মহলে উত্তেজনা দেখা দেয়। কিছু ইসলামপন্থী সংগঠন রাস্তায় নেমে “ISKCON নিষিদ্ধের” দাবি তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা ধরনের গুজব ছড়াতে থাকে। তবে ISKCON বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। একটি ধর্মীয় সংস্থার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক।”

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। তারা বলেছেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। কারও প্রতি পক্ষপাত নেই, আবার কাউকে অযথা অভিযুক্তও করা হবে না।” ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা যে-ই করুক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তে সত্য যা পাওয়া যাবে, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হবে।”

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ধর্মীয় উত্তেজনা ও অপপ্রচারের ইস্যু। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এমন একটি সময়ে যখন সামাজিক মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন নিয়ে প্রচারণা বাড়ছে, তখন যাচাইবাছাই ছাড়া কোনো দাবিকে সত্য ধরে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। তাদের মতে, মুফতি মুহিব্বুল্লাহর অভিযোগ সত্য হোক বা না হোক, এটি প্রমাণের দায়িত্ব এখন তদন্ত সংস্থার ওপর।

বর্তমানে মামলাটি রহস্যঘেরা এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। মুফতি মুহিব্বুল্লাহ নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অটল থাকলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। বাস্তবতা হলো— এই ঘটনার সত্যতা বা ভুয়ামি উভয়ই দেশের সামাজিক সম্প্রীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে প্রত্যাশা, একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তই শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তর দেবে।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন