গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ লালের ছেলে দুলাল দাস পেলেন গ্রাম পুলিশের চাকরি

4 week ago
VIEWS: 38

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনায় অবশেষে কিছুটা আলো ফিরল এক শোকার্ত পরিবারের জীবনে। গণপিটুনিতে নিহত ভ্যানচালক প্রদীপ লাল দাসের ছেলে দুলাল দাসকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রাম পুলিশের চাকরি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম নিজ কার্যালয়ে ডেকে তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।

দুলাল দাসের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। চাকরির সংবাদে দুলালের পরিবারের মুখে দীর্ঘদিন পর ফুটে উঠেছে হাসি।

চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত দুলাল বলেন, “আজ চাকরি পেয়ে মনে হচ্ছে সংসারটা আবার বাঁচতে পারবে। ইউএনও স্যার নিজ হাতে আমার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন। এখন অন্তত বাবার স্বপ্নটা পূরণে চেষ্টা করতে পারবো।”

দুলালের মা দুলালী রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথে পথে ঘুরেছি। আজ ছেলেকে চাকরি দিতে পেরে সরকার ও ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে আমি এখনো আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।”

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, “মানবিক বিবেচনায় নিহত ভ্যানচালক প্রদীপ লাল দাসের ছেলে দুলাল দাসকে গ্রাম পুলিশের ‘মহলদার’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, সে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবে। এই চাকরির মাধ্যমে তাদের দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।”

দুঃসহ সেই রাতের স্মৃতি

গত ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট এলাকায় চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন প্রদীপ লাল দাস ও তার আত্মীয় রুপলাল দাস। তারা এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন ভুলবশত তাদের চোর মনে করে মারধর শুরু করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রুপলাল ঘটনাস্থলেই মারা যান, আর প্রদীপ লাল পরদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী জীবন

পেশায় মুচি ছিলেন প্রদীপ লাল দাস। বছর কয়েক আগে পায়ে ইনফেকশন হয়ে তা কেটে ফেলতে হয়। এরপর জীবিকার জন্য শুরু করেন চার্জার ভ্যান চালানো। এক পা অকেজো হলেও কঠোর পরিশ্রমে সংসার চালাতেন তিনি। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে কষ্টের মধ্যেও স্বপ্ন দেখতেন শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী ভবিষ্যতের। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় এক নির্মম রাতেই।

তার মৃত্যুর পর পরিবারটি চরম অভাব-অনটনে পড়ে। মেয়ে পলাশী রানী চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েও এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে, ছোট ছেলে আপন বাবু সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দুলাল দাস ২০২১ সালে এসএসসি পাশ করেও চাকরি না পেয়ে হতাশ ছিলেন। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ তার পরিবারের জন্য আশার আলো হয়ে এলো।

প্রশাসনের মানবিক উদ্যোগে আশার বার্তা

ইউএনও নাজমুল আলম বলেন, “দুলালের বাবার মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা চাই এই পরিবারটি স্বাবলম্বী হোক এবং সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখুক।”

প্রদীপ লালের গ্রামের মানুষও প্রশাসনের এই মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

to join the global Sanatani Hindu Community
Connect with Sanatani Hindus from all over the world — share, learn, and grow together.
Explore Questions, Bhajan Lyrics, Leelas, Feeds, Business Pages, Products, plus Shlokas, Events, Courses, Jobs, Marriage, Help Posts, and more.
মন্তব্য করতে Login অথবা Registration করুন